গত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার সরকারের 'State Counsellor Office Information Committee' এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে কয়েকটি ভিডিও ও ছবি পোস্ট করা হয়। সেখানে একটি ছবির মধ্যে ক্যাপশন আকারে ইংরেজিতে লেখা ছিল- “25 September 2017, second day of found out the dead bodies of Hindus, killed and buried by ARSA extremist terrorists. (at the site of 1000 M far from N-W of Yebawkya Village)”.
এসব ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি পাহাড়ি এলাকায় বেশ কিছু লাশ মাটিতে রাখা (সরকারি হিসেবে ২৮টি) । সেখানে হেলিকপ্টারে পৌঁছে সরকারি লোকজন ঘটনাস্থল দেখছেন। সাধারণ পোশাকে অনেক মানুষ ও পুলিশের উপস্থিতিও রয়েছে। কোনো জায়গায় দেখা যাচ্ছে কর্মকর্তা গোছের এক লোক কয়েকজন নারীকে সান্তনা দিচ্ছেন।
ইংরেজি ক্যাপশনের পাশাপাশি বার্মিজ ভাষায় আরো অনেক কিছু লেখা আছে পোস্টগুলোতে। একটি পোস্টে ইংরেজিতে বলা হয়েছে--
"According to a villager of Hindu faith, a resident of Yebawkya village, who, nevertheless, was now in neighboring country made a contact by phone to U Ni Mal (a leader in helping Hindu people), a resident of 4 mile Maungtaw, now displaced to Sittway due to ARSA terrorist attacks, informing that about 300 ARSA terrorists had arrested and took away about 100 men and women of Yebawkya village on 25 August and at about 1000 meter in the west of the village the ARSA terrorists killed the villagers except 8 women who were forced-to covert to Islam and brought to Bengladesh."
অর্থাৎ, লাশগুলো রাখাইনের ইয়ে বাওকিয়া গ্রামের হিন্দু বাসিন্দাদের। আরসার সদস্যরা তাদেরকে মেরে গণকবর দিয়েছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে কথা বলেছে সুচি সরকারের মুখপাত্র জো থে’র সাথে। তিনি ফেসবুকে পোস্ট করা তথ্যগুলোই জানিয়েছেন। ২৮ জন হিন্দুর লাশ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০ জন নারী ৮টি শিশুর লাশ। একজন নামহীম হিন্দু শরণার্থীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, আরসার ৩০০ সদস্য ওই এলাকার শ’খানের মানুষকে গত ২৫ আগস্ট গ্রাম থেকে বের করে এনে হত্যা করে। তাদের মধ্যে আট নারীকে জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাতে সক্ষম হওয়ায় তাদেরকে আরসা সদস্যরা বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যায়। জো থে রয়টার্সকে বলেছেন, সরকার বিষয়টি আরো তদন্ত করে দেখছে।
মিয়ানমার সরকারের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে আরসা। আব্দুল্লাহ নামে পরিচিয় দেয়া সংগঠনটির একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে ‘মিথ্যা’ ছড়িয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে সরকার।
উপরে তুলে ধরা সরকারি দাবিটি ইয়ে বাওকিয়া গ্রামকে কেন্দ্র করে। সুচি সরকার বলছে, গ্রামটিতে 'রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী'রা বিদ্বেষের কারণে হিন্দুদেরকে হত্যা করেছে। অবশ্য একটি গ্রামের 'চিত্র' তুলে ধরে চালানো প্রচারণার মাধ্যমে 'পুরো রাখাইনের পরিস্থিতিই এমন'- এটা বুঝাতে চায় সরকার। আমরা সরকারের এই দাবির সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের পরে যাচ্ছি। তার আগে দেখে নিতে চাই রাখাইনের অন্যান্য এলাকা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা হিন্দুরা কী বলছেন?
২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন রাখাইনের বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫ শতাধিক লোকজন। তাদের অনেকে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ও বিশ্বের সংবাদমাধ্যমকে। বড় সংবাদমাধ্যমগুলোর বাইরে অনেক ফ্রিল্যান্সারও তাদের বক্তব্য সংগ্রহ করে অনলাইনে প্রকাশ করেছেন। আমরা এখানে তেমন কিছু হিন্দু লোকজনের বক্তব্য দেখবো- রাখাইনে হিন্দুদের ওপর হত্যাযজ্ঞের জন্য তারা কাকে বা কাদেরকে দায়ী করছেন।
কী বলছেন আশ্রয় নেয়া হিন্দুরা?
তার কথাগুলো ছিল এরকম-- "তারা ছিলো (মুখে) কালো কাপড় বাধা। চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাদের হাতে দা ছিল, কুড়াল ছিল, গুলি ছিল। আমাদের সাবাইকে তারা এক কোনে জড় করে এবং অনেককে কেটে ( হত্যা) ফেলে। তখন আমরা মুসলমানদের সাথে এখানে পালিয়ে আসি। মুসলমানরাও বলেছে ওদেরও ওরা কেটে ( হত্যা) ফেলছে। ওরা আমার শশুড়, শাশুড়িকে কেটে ফেলেছে, ননদকে কেটে ফেলেছে এবং তার ছেলেকেও কেটে ফেলেছে।"
(এটিএন বাংলার সাথে কথা বলছেন এক রোহিঙ্গা নারী)
কারা কেটে ফেলছিলো?
৩ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন হিন্দু নারীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন একাধিক ব্যক্তি। একটি প্রশ্ন ছিল, "তোমাদেরকে কি মুসলমানরা জুলুম করেছে?" উত্তরে এক নারী বলেন, "না না মুসলমানরা আমাদের জুলুম করেনি। বরং মুসলমানরা আমাদেরকে সাহায্য করেছে।" আবার প্রশ্ন করা হয়, "তাহলে জুলুম করেছে কারা?" উত্তরে ওই নারী ও তার সাথে থাকা একাধিকজন বলেন, "মগরা জুলুম করেছে। কেটে ফেলেছে অনেককে।" প্রশ্নকর্তা আবার জিজ্ঞেস করেন, "মগরা না শুধু মুসলমানদেরকেই হত্যা করছে?" জবাবে দুইজন নারী বলতে থাকেন, "তারা আমাদের (হিন্দুদের) কয়েকজনের স্বামীকেও খুন করেছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে মগদের সাহায্য না করায় তাদেরকে খুন করেছে।" অতঃপর প্রশ্নকারীরা উপস্থিত মহিলাদের একে একে বিস্তারিত পরিচয়, ঠিকানা বলতে বলেন। মহিলারা তাদের পরিচয় জানান।
(Rohingya VisionTV এর সাথে কথা বলছেন রোহিঙ্গা নারী বীনা শীল)
(ছবিতে দেখা যাওয়া মহিলার নাম বীনা শীল। তার সাথে ৯ সেপ্টেম্বর কুতুপালং পশ্চিমাপাড়া মন্দিরের পাশের মুরগী খামারে (অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র) সরাসরি কথা হয় এই প্রতিবেদন লেখকের। উপরে দেয়া ভিডিওতে তার নাম বলা হয়নি, তাই এখানে উল্লেখ করে দেয়া হলো।)
(এই লেখকের সাথে ৯ সেপ্টেম্বর সাক্ষাতের সময় দুই সন্তাসহহ বীনা শীল)
সংবাদমাধ্যম থেকে:
রাখাইনের ফকিরাবাজার এলাকায় নিজের পরিবারের সদস্যদের খুন হতে দেখে আসা বীনা শীল ও অন্য মহিলাদের ভিডিও বক্তব্য থেকে পরিস্কার যে, সেখানে 'রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী' বা সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলিমরা হত্যাযজ্ঞ চালায়নি। চালিয়েছে মগ বা বৌদ্ধ ধমাবলম্বী একটা জাতিগোষ্ঠির লোকজন।২৫ আগস্টের পর বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমেও পালিয়ে আসা হিন্দুদের একই রকম বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডলের অনলাইন পত্রিকা 'এইবেলা ডটকম'-এ গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- "যে কারণে হিন্দুদের হত্যা করছে মিয়ানমার সৈন্যরা"।
তাতে বলা হয়েছে, "মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত আট শতাধিক হিন্দু আরকান ছেড়ে বাংলাদেশের উখিয়ায় অবস্থান নিয়েছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের মতো তারাও নৃশংসতার স্বীকার হয়ে বাংলাদেশে আসছেন বলে জানালেও কিছু সূত্রে ভিন্ন তথ্য মিলেছে। সূত্র মতে, সৈন্যরা হিন্দু যুবকদের রাখাইন যুবকদের সাথে তাল মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও জবাইয়ে অংশ নিতে বাধ্য করছে। আর কেউ তাতে রাজি না হলেই তাকে হত্যা করছে।"
(এইবেলা ডটকম এর স্ক্রিনশট)
ফকিরাবাজার থেকে পালিয়ে আসা আরেক নারী বাংলাট্রিবিউনকে (২১ সেপ্টেম্বরের রিপোর্ট) বলেছেন, “অনিকা ধর বলেন, ‘তারা এলাকাবাসী সবাইকে মারধর করে পাহাড়ে নিয়ে গেছে। এসময় বেত দিয়ে সবার পায়ের নিচে পিটিয়েছে, আর দা দিয়ে কুপিয়েছে। এভাবেই তারা সবাইকে মেরে ফেলে।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদের কথামতো চলায় প্রাণে বেঁচে গেছি। আমার সঙ্গে আরও সাত জন নারী বেঁচে গেছে। তারা সবাই বাংলাদেশে আসতে পেরেছে কিনা জানি না। কিন্তু আমি মুসলিম নারীদের সঙ্গে চলে এসেছি।”
ওই এলাকার মুসলিম নারীরা পালাচ্ছিল। তাদের সাথে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন অনিকা ধর। এ থেকে বুঝা যায় ওই এলাকার মুসলিম রোহিঙ্গারা ‘পলায়নরত’ ছিল। ওই এলাকার মুসলিম রোহিঙ্গারা যদি অন্য জাতিগোষ্ঠির ওপর (যেমন হিন্দুদের ওপর) হত্যাযজ্ঞ চালানোর মতো শক্তিশালী অবস্থানে থাকতো তাহলে তারাই আবার পলায়নরত থাকতো না।
বিবিসি বাংলা ১ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট করে “মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা হিন্দু শরণার্থীরা কী বলছেন?” শিরোনামে। তাতে ফকিরাবাজার থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুদের কাছে রিপোর্টার জানার চেষ্টা করেছেন- কে ফকিরাবাজারে (যেখানে মুসলমানদের পাশাপাশি ৮৬ জন হিন্দুকে হত্যা হয়) হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে?
“হামলাকারীদের চিনতে পারিনি”- বলেও সবাই জানান। তার মধ্যে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য বিবিসির রিপোর্টে এসেছে এভাবে- “শিবকুমার নামে আরেকজন জানিয়েছেন, তার মা বাবা খালা সবাইকে হামলাকারীরা মেরে ফেলেছে। "হিন্দু মুসলমান সবাইকে মেরেছে। গুলি করেছে। ওরা কালো পোশাক পরা ছিল। আমি চিনি না। চারিদিক থেকে ঘেরাও করে আমাদের মারছে। হিন্দু মুসলমান সবাই এক সঙ্গে পালিয়ে এসেছি।”
হিন্দু-মুসলমান সবাইকে মারলে, এবং সবাই এক সাথে পালালে হামলাকারী কারা?
৪ সেপ্টেম্বর চ্যানেল আইয়ের রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, “৮৬ হিন্দু রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী”। পালিয়ে আসা হিন্দু শরণার্থীদের বরাতে রিপোর্টে জানানো হয়, “তারা বলছেন, মুসলিমদের পাশাপাাশি হিন্দুদের উপরও হামলা নির্যাতন হচ্ছে মিয়ানমারে। জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়িঘর, লুটপাট হচ্ছে সম্পদ। দিশেহারা হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশের দিকেই আসছেন তারা।”
ভিডিও দেখুন এখানে।
১২ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে একটি শিরোনাম ছিল, “রোহিঙ্গা নিধনে রাজি না হওয়ায় হিন্দুদের হত্যা করছে মিয়ানমার সৈন্যরা”। রিপোর্টটির ইন্ট্রো থেকে উদ্ধৃত-- “মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত আট শতাধিক হিন্দু আরকান ছেড়ে বাংলাদেশের উখিয়ায় অবস্থান নিয়েছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের মতো তারাও নৃশংসতার স্বীকার হয়ে বাংলাদেশে আসছেন বলে জানালেও কিছু সূত্রে ভিন্ন তথ্য মিলেছে। সূত্র মতে, সৈন্যরা হিন্দু যুবকদের রাখাইন যুবকদের সাথে তাল মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও জবাইয়ে অংশ নিতে বাধ্য করছে। আর কেউ তাতে রাজি না হলেই তাকে হত্যা করছে।”
(প্রসঙ্গত, উপরে উল্লেখ করা এইবেলা ডটকমের ১৪ সেপ্টেম্বরের রিপোর্টটি ইত্তেফাকের রিপোর্টের সাথে মিলে যায়।)
১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর “রাখাইন রাজ্য ছাড়ছেন হিন্দুরাও” শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে দু’টি প্যারা উল্লেখ করা হল--
“ফকিরা বাজার থেকে পালিয়ে আসা মিলন মল্লিক বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে তাঁদের (হিন্দুদের) কোনো বিরোধ নেই। অতীতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনো দাঙ্গাহাঙ্গামাও হয়নি। গত বছরের ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে তিনটি সীমান্তচৌকিতে হামলার পর টানা তিন মাস রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালায় সেনা ও পুলিশ। এ সময় কয়েক শ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। ধর্ষণের শিকার হন বহু রোহিঙ্গা নারী। এ সময় ৯০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য ত্যাগ করে বাংলাদেশ আশ্রয় নিলেও তখন কোনো হিন্দু পরিবার দেশ ত্যাগ করেনি। কিন্তু এবার একযোগে সীমান্তচৌকিতে হামলার জন্য হিন্দুদেরও সন্দেহ করছে মিয়ানমার। তাই এত অত্যাচার-নির্যাতন। উদ্দেশ্য রাখাইন রাজ্য ত্যাগ করা।”
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে--
“মংডুর চিকনছড়ির কুলালপাড়া থেকে পালিয়ে আসা বকুল বালা (৪৫) বলেন, গত বুধবার রাতে মুখোশধারী কিছু সশস্ত্র লোক তাঁর বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁর স্বামী কালু রুদ্র, মেয়ে সন্ধ্যাবালা ও নাতি বাপ্পুকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারেন তিনি। ওই রাতে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তাঁর দাবি, যারা হামলা চালিয়েছে, তারা বৌদ্ধ ভাষায় কথা বলেছে। তবে তারা সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কি না জানা নেই। একই এলাকার বিজয় রাম পাল (৩৬) বলেন, তিনি মংডুর চিকনছড়ি গ্রামে হাল চাষ করতেন। ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের ২০টির বেশি সীমান্তচৌকিতে একযোগে সন্ত্রাসী হামলার পর হিন্দুদের সঙ্গেও রোহিঙ্গাদের মতো আচরণ করতে শুরু করে সে দেশের সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। রোহিঙ্গাদের মতো হিন্দুদের ঘরবাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। রাম পাল বলেন, ‘বলা হচ্ছে, হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে আগত বাঙালি। অথচ আমরা জন্মসূত্রে মিয়ানমারের নাগরিক।”
১ অক্টোবর ঢাকা ট্রিবিউনের Who really attacked the Rohingya Hindus in Rakhine? শিরোনামের রিপোর্টে রাখাইনে হিন্দুদের হত্যায় কারা জড়িত সে বিষয়ে পালিয়ে আসা হিন্দু শরণার্থীদের কয়েকজনের বক্তব্য উঠে এসেছে (যদিও রিপোর্টে দেখানো হয়েছে কিভাবে ওইসব বক্তব্য পরে বদলে গেছে)। রিপোর্টটি থেকে কয়েক প্যারা উদ্ধৃত করা হল--
”A number of Hindu refugees while arriving in Bangladesh had told the media that they had lost their fathers and husbands at the hands of Myanmar army for their reluctance to partake in Muslim killing in Rakhine.
Cox’s Bazar Correspondent for New Age Mohammad Nurul Islam said: “They arrived in Bangladesh with the Muslim refugees and told us that the Buddhists had attacked them. We have audio records of their speeches.”
“Myanmar military and Buddhists killed my husband for not participating in killing and ousting Rohingya Muslims,” Anika Dhar, a pregnant Hindu housewife, had told the Daily New Age in late August.
She also told a senior journalist with the Reuters Television that she had taken shelter in a Muslim village after her husband was killed and came to Bangladesh with them.
Another woman, Padma Bala, who arrived in Bangladesh on August 30, told the same journalist: “The Moghs [Rakhine] are cutting us up.” The Reuters journalist is still in possession of the audio recording. Many Rohingya Hindus have said they received support from Muslim neighbours in escaping the army’s persecution.”
#রাখাইনের হিন্দুদের ‘ভারতীয়’ মনে করে সরকার ও বৌদ্ধরা:
‘হিন্দুরা ভারতীয়’- এটা মিয়ানমার সরকারের ঘোষিত নীতি। রাখাইনের হিন্দুদেরকে দেয়া বিশেষ ধরণের সরকারি আইডি কার্ডে ‘ভারতীয়' লেখা থাকে। ডেইলি স্টার ৩১ আগস্ট এক রিপোর্টে এ বিষয়ে জানিয়েছে- "His identify card issued by the Myanmar government introduced him as “Indian”, said our correspondent."
ফলে ‘তোরা ইন্ডিয়ার হিন্দু ইন্ডিয়াতে চলে যা’ বলে কারা হামলা চালাতে পারে সেটি সহজেই অনুমেয়।
#হিন্দুদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের প্রমাণ বিবিসিতে:
এই দাবির সত্যতা মিলে বিবিসির একটি প্রামাণ্য প্রতিবেদনে। Rohingya crisis: Seeing through the official story in Myanmar শিরোনামের রিপোর্টে ১১ সেপ্টেম্বর বিবিসির সাংবাদিক জনাথন হেড দেখিয়েছেন কিভাবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একজন হিন্দু নারীকে 'হিজাব' পরিয়ে, এবং তার সাথে থাকা আরেক পুরুষকে দিয়ে মুসলমানদের ঘরে আগুন ধরাতে বাধ্য করছে।
(বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে এই ছবি দুটি সরবরাহ করে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছবিতে দেখা যাওয়া নারী ও পুরুষ উভয়ে মুসলিম। তারা নিজেরাই তাদের ঘরে আগুন দিচ্ছে!)
(কিন্তু পরে যখন বিবিসির সংবাদদাতা রাখাইনে উচ্ছেদ হওয়া একটি হিন্দুদের একটি ক্যাম্পে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান, তখন তিনি সরকারের দেয়া ছবির ‘মুসলিম’ মহিলা ও পুরুষটিকে সেখানে দেখতে পান! উপরের প্রথম ছবিতে ’স্কার্ফ’ পরা নারীই নিচের ছবিতে আছেন। তিনি মূলত তার ওড়নাকে স্কার্ফ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।)
(এই ছবি সরকারের বিতরণ করা। এখানকার পেছনের লোকটির চেহারা ও শার্টের সাথে মিলে যায় (নিচের ছবি লক্ষ্যণীয়) হিন্দু ক্যাম্পে খোঁজ পাওয়া লোকের চেহারা ও শার্ট!)
(রাখাইনে হিন্দু ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া লোক, যিনি সরকারের ভাষ্য মতে, নিজের ঘরে আগুন দেয়া মুসলিম!)
রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারই মিয়ানমার সরকারের নীতি:
আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি শুরু করেছিলাম যে প্রসঙ্গ দিয়ে তাতে। ইয়ে বাওকিয়া গ্রামে ২৮ জন হিন্দু আরসা কর্তৃক হত্যার শিকার হওয়ার যে দাবি মিয়ানমার সরকার করেছে তা কতটা সঠিক? এক্ষেত্রে প্রথম উত্তর হচ্ছে, নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে, ওই ২৮ জন হিন্দুকে কাদের হাতে খুন হয়েছে- আরসা'র , নাকি মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী, নাকি বৌদ্ধ উগপন্থীদের হাতে?দ্বিতীয়ত, উপরে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুদের বর্ণনাকে আমলে নিলে ইয়ে বাওকিয়া গ্রামের ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তারও একটা সূত্র অনুমান করে নেয়ার সুযোগ থাকে।
তৃতীয়ত, দোষী কারা তা বুঝতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, মিয়ানমার সরকারে নির্জলা মিথ্যাচারের অতীত ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য রাখা। বিবিসির Rohingya crisis: Seeing through the official story in Myanmar শিরোনামের প্রতিবেদনেই দেখানো হয়েছে সুচি সরকারের কর্মকর্তারা কতটা মিথ্যার আশ্রয় নেন। বিবিসির জনাথন হেড দেশটির সীমান্ত প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল ফোন টিন্টকে প্রশ্ন করেছিলেন, রাখাইনে মুসলমানদের গ্রামগুলো কারা পুড়িয়ে দিচ্ছে? উত্তরে মন্ত্রী বলেন, 'বাঙালি সন্ত্রাসী আরসা নিজেরা পোড়াচ্ছে।' রিপোর্টার যখন আবার প্রশ্ন করলেন, 'সবগুলো গ্রামই কি তারা নিজেরা পোড়াচ্ছে?' মন্ত্রী বললেন, '১০০ ভাগ।'
অথচ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তাদের তদন্তের মাধ্যমে জানিয়েছে, বাড়িঘর-গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জড়িত।
বিবিসির রিপোর্টেও দেখানো হয়েছে, বৌদ্ধ তরুণরা কিরিচ হাতে নিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রামে মহড়া দিচ্ছে এবং আগুন ধরাচ্ছে। ভিডিও দেখুন এখানে।
নোট-:
বদলে যাচ্ছে পালিয়ে আসা হিন্দুদের বক্তব্য:
উপরে বিভিন্ন রিপোর্টে পালিয়ে আসা হিন্দুদের যে ধরণের বক্তব্য উঠে এসেছে তা আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পালিয়ে আসার পর প্রথম দিকে যেসব মহিলা মগ ও মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে দায়ী করে ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের অনেকের ভাষ্য এখন বদলে গেছে। যার একটা প্রমাণ বিডিনিউজের "হিন্দু শরণার্থীদের অভিযোগ ‘রোহিঙ্গা জঙ্গিদের’ বিরুদ্ধে" ও ঢাকা ট্রিবিউনের Who really attacked the Rohingya Hindus in Rakhine? শিরোনামের রিপোর্ট দু’টি। ভাষ্যের এই বদল নিয়ে আলাদা আরেকটি লেখা শিগগিরই পোস্ট করা হবে।
Ami kotha bolte chai apnar saathe. Ami akjon sangbadik, India-te thaki. England-er THE GUARDIAN er bishesh protinidhi ami. Amar WhatsApp No: 91 98302 51494.
উত্তরমুছুন