বনানীর হোটেল রেইন ট্রি'তে আটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা এই মুহুর্তে টক অব দ্য কান্ট্রি। এ নিয়ে বিবরণ দেয়া কিছু নেই। সবাই জানেন ঘটনা কী এবং এখন কী হচ্ছে। মর্মান্তিক, বর্বর এই ঘটনায় সব মানুষই মর্মাহত। অবশ্য 'সব মানুষ' কথাটা খুব জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ, সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যেই দেখা গেছে কিছু অদ্ভুত মানুষ
ভিকটিম মেয়ে দুটির ত্রুটি খুঁজেই সময় পার করছেন। কোনো মর্মাহত মানুষ এমনটা করতে পারে না।
আবার সংবাদমাধ্যমের একটি অংশ, যদিও খুবই ক্ষুদ্র অংশ, এমন বর্বর ঘটনাকে তাদের 'ব্যবসার উপলক্ষ্য' বানাচ্ছে। গত ৬ মে প্রথম সংবাদমাধ্যমে খবরটি আসার পর এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ভিকটিমদের বিচারপ্রাপ্তির যতটুকু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তার প্রায় সিংহভাগই কৃতিত্ব সংবাদমাধ্যমেরই। ২৮ মার্চের ঘটনা প্রায় দেড় মাস ধরে লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে অভিযুক্তদের ক্ষমতা আর টাকার কারণে। এই ক্ষমতা আর টাকাকে ব্যবহার করে পুলিশকেও হাত করেছিলো অপরাধীরা। এজন্য কয়েকদিন ঘুরিয়েও মামলা নিতে চায়নি পুলিশ। কিন্তু যখন সংবাদমাধ্যমগুলো একযোগে সংবাদ প্রচার শুরু করলো, সাথে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ শুরু হল, তখন ক্ষমতা আর টাকার জোর কিছুটা ম্রিয়মান হতে শুরু করলো। পুলিশ মামলা নিল, ক'দিন গড়িমসি করলেও পরে গ্রেফতারে বাধ্য হল দুই আসামিকে। এখন রিমান্ড, জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলছে।
সংবাদমাধ্যমের এই ক্ষমতা অপরাধীপক্ষ ভালভাবেই বুঝার কথা, বিশেষ করে একজন অভিযুক্ত অপরাধীর পরিবার যখন বড় ব্যবসায়ী। এই মাধ্যমটির 'মুখ' বন্ধ করতে পারলে চাপ কমে আসবে। বাকিটা এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ধীরে ধীরে।
যাইহোক। এখন আমরা দেখবো বনানীর ধর্ষণকাণ্ডে তিনটি পত্রিকা কেমন রহস্যজনক আচরণ করছে। পত্রিকা তিনটির নাম- দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং দ্য ডেইল সান।
ধর্ষণের ঘটনাটির খবর প্রথম প্রকাশ পায় ৫ মে। প্রিন্ট পত্রিকাগুলোতে ছাপা হয় ৬ মে। এ দিন অন্য সব পত্রিকার মতো এ কালের কণ্ঠ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনেও খবরটি ছাপা হয়েছে। কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় তিন কলামে শিরোনাম ছিল “দুই শিক্ষার্থীকে হোটেলে আটকে গণধর্ষণ”। অনেক বিস্তারিত প্রতিবেদন। প্রতিবেদক ঘটনাস্থল রেইন ট্রি হোটেলে গিয়েও বক্তব্য নিয়েছেন সেখাকার লোকজনের।
৬ মে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৩য় পাতায় ছিল তিন কলামে শিরোনাম “দুই শিক্ষার্থীকে হোটেলে আটকে গণধর্ষণ”। সাথে ইনসার্টে এও ছিল “মামলা নিতে টালবাহানার অভিযোগ”। তবে এই দিন ডেইলি সান-এ (প্রিন্ট) বিষয়টি নিয়ে কোনো রিপোর্ট ছিল না।
পরের দিনগুলিতেও কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ফলোআপ রিপোর্ট করেছে। যেমন ৭ মে কালের কণ্ঠের শেষ পাতায় সিঙ্গেল কলাম শিরোনাম ছিল “মামলা দায়ের, হুমকিতে উৎকণ্ঠায় দুই শিক্ষার্থী”। এদিন বাংলাদেশ প্রতিদিনে কোনো ফলোআপ ছাপা হয়নি।
৮ মে কালের কণ্ঠের শেষ পাতায় ডাবল কলাম শিরোনাম “আসামিরা এখনো অধরা”। ইনসার্টে বলা হয়েছে “তদন্তে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ”। এ দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনের শেষ পাতায় সিঙ্গেল কলাম “এখনো গ্রেফতার হয়নি কেউ”।
৯ মে কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় সিঙ্গেল কলাম, “সাফাত বাসাতেই, খুঁজে পায় না পুলিশ”। এদিন বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় ডাবল কলাম শিরোনাম, “মামলার তদন্ত যাচ্ছে ডিবিতে”। সাথে মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট সালমা আলীর সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন “অপরাধী যেই হোক শাস্তির আওতায় আনতে হবে”।
১০ মে কালের কণ্ঠের শেষের পাতায় ডাবল কলাম শিরোনাম “জানান দিয়ে লোকদেখানো অভিযান পুলিশের”। ইনসার্ট: “চার বন্ধুকে নিয়ে সিলেটে সাফাত!” এ দিন বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রথম পাতায় ঘটনা সংক্রান্ত দুটি রিপোর্ট করে “আসামিদের ধরতে বাসায় অভিযান, সবাই সিলেটে” ও ‘সাদমান সাকিফ আমার ভাই নন”।
১১ মে কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় বক্স আইটেম হিসেবে দুটি সিঙ্গেল কলাম রিপোর্ট ছাপা হয়। “হালিম থেকে নাইম, প্রতারণায় পাকা হাত” ও “পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে সমঝোতার চাপ”। বাংলাদেশ প্রতিদিন এ দিন প্রথম পাতায় সিঙ্গেল কলামে ছাপায় “সাফাত ও চার সঙ্গী এখনো অধরা”।
১২ মে শবে বরাতে সব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ছিল। ১৩ মে সংখ্যায় হঠাৎ করে চুপসে যায় এতদিন ধরে বেশ ভালভাবে কভারেজ দিয়ে আসা দুটি পত্রিকা! বনানীর ঘটনা নিয়ে কিছু নেই এদিন। অথচ ১৩ মে’র পত্রিকাতেই ‘বহু কাঙ্খিত’ গ্রেফতারের খবরটি প্রথম প্রকাশ পায়। ‘গ্রেফতার হয়নি কেউ’ ‘এখনো অধরা’ এমন শিরোনামে আগে সংবাদ প্রকাশ করে এসে যখন গ্রেফতার হল তখন কালের কণ্ঠ-বাংলাদেশ প্রতিদিনের আগ্রহে ভাটা পড়লো! বিস্ময়ের বিষয়ই! অন্যান্য সব জাতীয় পত্রিকা গ্রেফতারের খবরটি প্রথম পাতায় বড় বড় শিরোনাম ছাপিয়েছে এদিন।
উপরোল্লিখিত একই ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকানাধীন ডেইলি সান ৬ মে যেমন কোনো সংবাদ ছাপায়নি, তেমনি ১৩ মে’তেও বনানী ধর্ষণ ইস্যুতে একদম খালি পত্রিকাটি। মাঝখানে অবশ্য দুয়েকদিন রিপোর্ট করেছিল। (কিন্তু এই লেখকের পক্ষে ডেইলি সান-এর সবগুলো সংখ্যা (৬ থেকে ১৩ মে) ঘেঁটে দেখা সম্ভব না হওয়ায় রিপোর্টগুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়নি।)
এটা গের প্রিন্ট কপি পত্রিকার প্রসঙ্গ। এখন দেখা যাক কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইন কী করছে?
অনলাইনে ঘেঁটে দেখা গেছে, পত্রিকা দুটি ওয়েবসাইটে বনানী সংক্রান্ত প্রকাশিত বেশ কয়েকটি রিপোর্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গুগল সার্চে এরকম কিছু শিরোনাম লেখার পর আসা লিংকে করলে ওয়েবসাইটে গিয়ে রিপোর্টটি পাওয়া যায় না। আবার বেশিরভাগ রিপোর্ট এখনো ওয়েবসাইটে বহাল আছে। বিশেষ করে প্রিন্টে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো অনলাইনে এখনো পাওয়া যাচ্ছে।
অনলাইনে প্রকাশিত কিন্তু এখন সরিয়ে ফেলা কয়েকটি প্রতিবেদনের লিংক এখানে দেয়া যায়:
১১ মে-
ধর্ষণের শিকার তরুণীর পোশাক রাসায়নিক পরীক্ষার অনুমতি
http://www.kalerkantho.com/home/printnews/496433/2017-05-11
বনানীর দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি সাফাত ও সাদমান গ্রেপ্তার
http://www.kalerkantho.com/home/printnews/496468/2017-05-11
জবানবন্দি দিলেন ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থী
http://www.kalerkantho.com/online/Court/2017/05/11/496458
১২ মে-
ঢাকায় আনা হয়েছে সাফাত-সাদমানকে, মামলা ডিবিতে
http://www.kalerkantho.com/home/printnews/496505/2017-05-12
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানার এই তিনটি পত্রিকার আচরণ বেশ ধাঁধার সৃষ্টি করেছে! এতদিন ঠিক মতোই কভারেজ দিয়ে এসে হঠাৎ করে কেন ১৩ মে বনানী ইস্যুকে ব্লাক আউট করা হল? অনলাইনে কেন কিছু রিপোর্ট প্রকাশের পর আবার সরানো হল বা হচ্ছে? আবার বেশিরভাগ রিপোর্ট তো অনলাইনে এখনো পাওয়া যাচ্ছে। পুরো বিষয়টাই কেমন যেন গোলমেলে! বিশেষ করে যখন ইতোমধ্যে ধর্ষণকাণ্ডটি ‘জাতীয় ইস্যু’তে পরিণত হয়েছে তখন একদিনের পত্রিকায় ব্লাক আউট করে কি এটিকে ধামাচাপা দেয়া যাবে, বা গেছে? এমন ‘নগ্নভাবে’ সংবাদ গায়েব করে দেয়ার চেষ্টা কি পত্রিকাগুলোর নিজের জন্য ক্ষতিকর নয়? নিয়মিত গ্রাহকদের কাছে কি তাদের সাথে এই প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়বে না? কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান-এর কর্তৃপক্ষের এই আচরণ আসলেই অদ্ভুত এমন রহস্যজনক!
Intelligence agency gulo somoy nichche. Manusher smriti theke ei issue ta black out korar. Tar primary test ei Basundhara group er media diye chalano hochchhe bole mone hoy. Sabbir murder case ta evabe samal deoya hoyechilo
উত্তরমুছুনবসুন্ধরা গ্রুপ মিডিয়াতে এসেছে শয়তানির জন্য এইটা সবাই জানে কিন্তু
উত্তরমুছুনপ্রথম আলো তো ফার্স্ট ও লাস্ট পেইজে কোন নিউজও করে নি !! এই ব্যাপারে আপনি কোন প্রশ্ন না করে যেই পত্রিকা গুলোর ভূমিকা ভালো ছিল তারা হঠাত প্রথম আলোর মত নিরব কেন হলো এই প্রশ্ন করতেছেন । হা হা
প্রথম আলো কেন নিরব এইটা সবচেয়ে অদ্ভুদ আচরণ , আপনার লেখা ভাল লাগতো বুঝতাম আপনি ইমপার্শিয়াল , বাট ...
Mustafiz Rahman, আপনি কোন দিনের প্রথম আলোর কথা বলছেন? একটু উল্লেখ করবেন? আমি প্রথম আলোর প্রথম বা শেষ পাতায় প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ দেখেছি।
উত্তরমুছুন