শনিবার কিংবন্তদীর মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম মাধ্যমগুলো নানা খবর পরিবেশন করছে। এর মধ্যে আছে আলীর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রতিবেদনও। কিন্তু এই ধরনের প্রতিবেদনগুলোতে একটি প্রবণতা দেখা গেছে, আলীকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম কেউই একবারের জন্য হলেও খবরের কোথাও উল্লেখ করছে না। শুধু ‘১৯৭৮ সালে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়’ বলেই ইতি টানছে।
এর মধ্যে প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে আরেকটু অগ্রসর হয়ে আলীকে বাংলাদেশের আনার পুরো কৃতিত্ব একটি বিদেশী সংস্থাকে দিয়ে দেয়া হয়েছে, যেটি পুরোপুরি সত্য নয়।
‘আলীর সঙ্গে ‘বাংলার আলী’র স্মৃতি’ শিরোনামের একটি সংবাদে প্রথম আলো বলছে, “তাকে ঢাকায় এনেছিল একটি বিদেশি সংস্থা।” এই বাক্যের আগে পরে বা পুরো সংবাদে সম্পূরক কোনো তথ্য নেই।
অর্থাৎ, বক্সিং কিংবদন্তীর বাংলাদেশে আসার ব্যাপারটি বিদেশী একটিং সংস্থার উদ্যোগ, তাতে আর কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রথম আলোর এই তথ্যটি পুরোপুরি সত্য নয়। বরং বলা যায়, মূল সত্যটাকেই পাশ কেটে গিয়েছে পত্রিকাটি।
মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়টি মূলত বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ উদ্যোগ। যার উদ্দেশ্য ছিল এখানকার দূর্গত মানুষদের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এমন উদ্দেশ্য সামনে রেখে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী তার ব্যবসায়িক বন্ধু এবং নামকরা লেখক ও সাংবাদিক রেজিনাল্ড ম্যাসিকে (Reginald Massey) অনুরোধ করেন বাংলাদেশের ওপর একটা ফিল্ম তৈরি করতে, যাতে বিশ্ববাসী এখানকার মানুষ সম্পর্কে জানতে পারে।
সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে ম্যাসি আইডিয়া দেন যে, যদি বক্সার মোহাম্মদ আলীকে নিযে এসে একটা ডকুমেন্টারি বা ফিল্ম ধরনের কিছু করা যায় তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়। এতে বিশ্ববাসীর নজর পড়বে ভাল।
তাদের এই চিন্তাকে বাস্তোয়ন করা বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব ছিল না। তারা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অনুরোধ করেন মোহাম্মদ আলীকে নিজে আমন্ত্রণ জানাতে। জিয়া তাতে খুবই উৎসাহের সাথে রাজি হন এবং শুধু তা-ই নয়, আলীর সাথে তার পরিবার এবং সফরসঙ্গীদেরকে রাষ্ট্রীয় অথিতি হিসেবে অভ্যর্থনা জানান। একই সাথে তাকে নাগরিকত্বও প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ম্যাসি ‘Working with Muhammad Ali, the boxing champ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, “We persuaded Bangladesh's President Zia-ur-Rehman to invite Ali, his wife and his entourage to visit Bangladesh.”
Add caption |
অর্থাৎ, ‘আলী, তার স্ত্রী এবং সফরসঙ্গীদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাতে আমরা প্রেসিডেন্ট জিয়াকে অনুরোধ করি।”
যেখানে জিয়াউর রহমান নিজে আমন্ত্রণ করে (যদিও আইডিয়াটি অন্যের দেয়া) বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন সেখানে ‘একটি বিদেশী সংস্থা তাকে আনে’ বলে দাড়ি টেনে দেয়াটা কি ‘সঠিক তথ্য প্রদান’ হতে পারে ?
Bangladesh I Love You শীর্ষক অন্য একটি প্রবন্ধে (২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত) রেজিল্যান্ড ম্যাসি লিখেছেন, “Full marks to President Ziaur Rahman and his officials. Ali, his wife Veronica and his entire entourage were state guests and treated like royalty.”
ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ম্যাসির প্রবন্ধ |
অর্থাৎ, “সম্পূর্ণ কৃতিত্ব প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং তার কর্মকর্তাদের। আলী, স্ত্রী ভেরোনিকা এবং তার পুরো সফরসঙ্গী দলকে রাষ্ট্রীয় অথিতির মর্যাদা দিয়ে রাজকীয়ভাবে রাখা হয়েছিল।”
এমতাবস্থায় আলীর সফরকে শুধুমাত্র একটি লাইনের মাধ্যমে “তাকে ঢাকায় এনেছিল একটি বিদেশি সংস্থা।” বলে বাকি তথ্যকে পুরোপুরি পাশ কাটিয়ে যাওয়া প্রথম আলোর মত একটি স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমে জন্য কতটা ‘সাংবাদিকতা-সূলভ’ আচরণ হয়েছে সেটা পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন