এক.
“প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ,
“প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ,
দুই.
বাংলাদেশ
নিয়ে দুটি চমৎকার অনুপ্রেরণাদায়ী গান। দুটিতে কিছু মিল কিছু অমিল আছে। মিল
যেমন- দুটি গানই দেশাত্মবোধক, দুটি গানেই একই দেশের জন্য লেখকদ্বয়ের দরদ
ফুটে উঠেছে, দুটি গানই রচিত হয়েছে সার্বজনীন উদ্দেশ্যে, তবে পরবর্তীতে গান
দুটি যে কোনো কারণেই হোক আলাদা আলাদাভাবে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক
দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা তৈরি করে নিয়েছে।
আর
প্রধান অমিলটা হচ্ছে, রচয়িতাদ্বয়ের উদ্দেশ্য সার্বজনীন হলেও প্রথম গানটির
লিরিকের মধ্যে সরাসরি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক পক্ষের (বাংলাদেশী) কাছে প্রিয়
হয়ে ওঠার মতো বিশেষ কোনো উপাদান নেই, কিন্তু দ্বিতীয় গানটিতে সরাসরি তেমন
একটি উপাদান আছে।
‘মুক্তিযুদ্ধের
সময়কার শেখ মুজিব’ বাংলাদেশের একজন সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি
হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত হলেও, যুদ্ধপরবর্তী মুজিব সার্বজনীন নন। তার
রাজনৈতিক দল ছিল, তার পক্ষ ছিল, তার প্রতিপক্ষ ছিল। ফলে মুজিবের নাম
সম্বলিত কোনো সাহিত্যকর্ম যথেষ্ট মানসম্পন্ন হওয়া, এবং লেখার পেছনে
উদ্দেশ্যের সার্বজনীনতা থাকা সত্তেও যদি কেউ সেটিকে ‘বিশেষ রাজনৈতিক পক্ষীয়
সাহিত্যকর্ম’ বলে অভিহিত করে এড়িয়ে চলতে চায় তাহলে তাকে খুব বেশি দোষ দেয়া
যাবে না।
দ্বিতীয়
গানটির লিরিকে শেখ মুজিবের নাম রয়েছে। মুজিবের নাম সাধারণভাবে একটি
‘আওয়ামী উপাদান’। ফলে এটিকে মুজিবের রাজনৈতিক দল ‘আওয়ামী লীগের গান’ বলার
সুযোগ কউ নিতে চাইলে নিতে পারবে। কিন্তু প্রথম গানটিতে বিএনপি বা তার
প্রধান-পুরুষ জিয়াউর রহমান, বা এরকম কোনো বিএনপি-সংশ্লিষ্ট বিষয় নেই। গানের
অন্তর্গত কোনো কারণে এটির সার্বজনীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।
কিন্তু
বহির্গত কারণে (চর্চা) এটিকেও একটি রাজনৈতিক রং দেয়ার সুযোগ আছে। ‘বিএনপির
গান’ বলা যায়। এটিকে বিএনপি তাদের ‘দলীয় সঙ্গীত’ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
তাদের নেতাকর্মীরা গানটি বেশি বেশি গেয়ে বা গাইয়ে থাকেন বিভিন্ন উপলক্ষে।
চর্চার
দিক থেকে ‘লক্ষ মুজিবরের’ গানটির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ‘দলীয়
সঙ্গীত’ হিসেবে গ্রহণ না করলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা উপলক্ষ্যে
গানটি গেয়ে থাকেন বা গাইয়ে থাকেন।
এখন
এক কথায় পুরো বিষয়টিকে তুলে ধরা যাক-- প্রথম গানটি তার লিরিকের দিক থেকে
নিরপেক্ষ হলেও চর্চার দিক থেকে ‘বিএনপি’, আর দ্বিতীয় গানটি তার লিরিক এবং
চর্চা উভয় দিক থেকেই ‘আওয়ামী লীগ’! অর্থাৎ, দ্বিতীয় গানটি ‘বেশি আওয়ামী
লীগ’ বা ‘বেশি রাজনৈতিক রূপসম্পন্ন’ আর প্রথমটি ‘কম বিএনপি’ বা ‘কম
রাজনৈতিক রূপসম্পন্ন’।
গান
দুটির মধ্যকার পার্থক্য স্পষ্ট হওয়ার পর এখন আমরা দেখবো বাংলাদেশের
শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম দুটি গানের প্রতি কী রকম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ
করছে এবং প্রচার করছে?
বাংলানিউজ২৪ ডটকম ৬ জুন রাতে ‘বেতারে বিএনপির গান, তদন্তে জামায়াতপন্থি’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সে সংবাদের ইন্ট্রোর ভাষা ছিল এরকম--
“বাংলাদেশ
বেতারে বিএনপি-জামায়াতিদের এড়ানোই যাচ্ছে না। যে কোনও কিছুতেই তাদের
অংশগ্রহণ দিন দিন পাকাপোক্ত হচ্ছে। উর্ধ্বতনদের সীমাহীন দুর্নীতি আর
দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নিয়ে এমনটা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও অজানা কারণেও
বিএনপি-জামায়াতিরা বেশি বেশি সুযোগ পাচ্ছে বেতারে।”
আরেক
জায়গায় লেখা হয়েছে, “আর তারও চেয়ে বড় পরিহাস হচ্ছে ওই ঘটনা তদন্তে যে
কমিটি তাতেও রয়েছেন চিহ্নিত বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তা।”
(সংবাদটির
ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে, গত ২ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বেতারে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি
পরিবেশন করা হয়। তার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ১৬জন বেতার কর্মকতা
কর্মচারিকে শোকজ করা হয়েছে, যাদের ৬জনকে প্রাথমিকভাবে বরখাস্তও করা হয়েছে। এ
বিষয়ে আরো অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। বাংলানিউজের
উপর্যুক্ত বিশেষ প্রতিবেদনে সেটির ফলোআপ করা হয়েছে।)
প্রতিবেদনের
প্রথম প্যারার কথাগুলো কাউকে উদ্ধৃত করে বলা হয়নি। এটি রিপোর্টার বা
অন্যভাবে বললে বাংলানিউজের নিজস্ব বক্তব্য। রিপোর্টের সারমর্মটুকু নিজের
ভাষায় উপস্থাপন করেছেন লেখক।
একটা
সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, প্রথম লাইনটিকে (‘বাংলাদেশ বেতারে
বিএনপি-জামায়াতিদের এড়ানোই যাচ্ছে না’) পরোক্ষভাবে ‘প্রথম পুরুষ’-এ লেখা
হয়েছে! ‘বেতারে বিএনপি-জামায়াতিদের এড়ানো’কে এখানে ‘নিজের কাজ’ হিসেবে মনে
করছেন রিপোর্টার। কারা এড়াবে? যারা বেতারকে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করেন
তারেই তো। অর্থাৎ সরকার। বাংলানিউজের রিপোর্টার তার অবচেতন মনের খায়েশ থেকে
‘সরকারের জুতা পরে’ বলছেন ‘এড়ানো যাচ্ছেই না’। ‘এড়ানো’কে তিনি ‘অন্যের’
কাজ আর মনে করছেন না, নিজের দায়িত্ব মনে করছেন। তাই ‘কে এড়াতে পারছে না’ এই
প্রশ্রে উত্তর তিনি ‘এক্টিভ ভয়েসে’ না দিয়ে ‘প্যাসিভ ভয়েসে’ দিচ্ছেন এবং
তাতে নিজেকেও অন্তর্ভূক্ত করে নিচ্ছেন।
রিপোর্টার
নিজেই ‘বিএনপি-জামায়াতিদের’ এড়াতে চান, বা এদের এড়ানোকে ‘আইডিয়াল স্টেন্স’
বা ‘মোরাল রেসপনসিবিলিটি’ মনে করেন। ফলে ‘এড়াতেই পারছে না সরকার’ এর বদলে
‘এড়ানোই যাচ্ছে না’ লিখে নিজেকে ওই চিন্তার সাথে একাত্ম করে নিজের ‘মোরাল
রেসপনসিবিলিট’ আদায় করলেন তিনি।
পরের
বাক্যেই বিএনপি-জামায়াতিদেরকে ‘তাদের’ বলে ‘অপর’ হিসেবে চিহ্নিত করার
মাধ্যমে (যেমনটি ‘সরকার’ এর ক্ষেত্রে করা হয়নি) সরকারের সাথে নিজেকে
রিপোর্টারের একাত্ম করে নেয়ার মনোভাবটি আরেকটু স্পষ্ট হয়। তাড়াছা
বিএনপি-জামায়াতিরা যে ‘বেশি বেশি সুবিধা পাচ্ছে’ তাতেও লেখকের আফসোস ঝরে
পড়ছে। অযোগ্য ব্যক্তি বেশি সুবিধা পেল কিনা তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই।
বিএনপি-জামায়াতিরা কেন পাবে, এটাই বাংলানিউজ রিপোর্টারের মাথা ব্যথার কারণ।
পরের
প্যারায় ‘তারও চেয়ে বড় পরিহাস হচ্ছে’ বাক্যাংশ দিয়ে তিনি সরাসরি বলে দিলেন
যে, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি বেতারে প্রচারিত হওয়া একটা
‘পরিহাস’মূলক ঘটনা! তবে ‘একটু ছোট পরিহাস’! বড় ‘পরিহাস’টি হচ্ছে,
বিএনপি-জামায়াতিদের ‘অপকর্মে’র তদন্ত ‘বিএনপির লোক’ বলে পরিচিত একজনকে
দেয়া।
বিএনপির
চর্চায় থাকা দেশাত্মবোধক একটি গাওয়াকে ‘পরিহাস’ মনে হলো যে বাংলানিউজের
কাছে, সেই বাংলানিউজ-ই আওয়ামী লীগের চর্চায় থাকা আরেকটি দেশাত্মবোধক গানের
প্রতি কী মনোভাব পোষণ করে তা এখন দেখবো।
২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর “সেই গানের ইতিহাস: শোনো, একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের.. " শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে লেখা হয়--
“গৌরীপ্রসন্ন
মজুমদারের কথায় এবং অংশুমান রায়ের সুরে ও গায়কিতে এ গান বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধে দুই বাংলার মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছিল। বলা হয়-
মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মনে এক দারুণ অনুপ্রেরণার উৎস ছিল গানটি।”
বাংলানিউজ মনে করে, এই গানটি ‘দারুণ অনুপ্রেরণার উৎস’ যা স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছিল’।
প্রতিবেদনের
আরেক জায়গায় জানানো হয়েছে, “এ গানের পেছনের ইতিহাস খুঁজতে নেমেছিল
বাংলানিউজ।” অর্থাৎ, গানটির ইতিবাচক গুরুত্ব বাংলানিউজের কাছে এতই বেশি যে,
সেটির ইতিহাস অনুসন্ধানের তাগাদাবোধ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
আওয়ামী-ঘনিষ্ট
(এবং ‘বেশি আওয়ামী লীগ’ হিসেবে উপরে প্রমাণিত) দেশাত্মবোধক গানের ইতিহাস
খুঁজতে নামা বাংলানিউজ দেশাত্মবোধক অন্য একটি গান শুধু বিএনপি-ঘনিষ্ট (‘কম
বিএনপি’ হিসেবে উপরে প্রমাণিত) হওয়ার কারণে সেটির খুঁত খুজতে নেমে গেল! এটি
গাওয়াকে ‘পরিহাস’ বলে তুলে ধরলো। ‘কেন গাওয়া হল’ তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিরাট
সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারির বড় শাস্তি নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠলো! ‘যদি
শাস্তি না হয়’ এই আশংকা থেকে শ্লেষাত্মকভাষায় বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে
শাস্তি নিশ্চিত করার চাপ প্রয়োগ করলো!
সাংবাদিকতার ছলে রাজনৈতিক পক্ষসেবার এ কেমন নির্মম উদাহরণ!
সাংবাদিকতার ছলে রাজনৈতিক পক্ষসেবার এ কেমন নির্মম উদাহরণ!
বাংলানিউজ, বিডি নিউজ, একাত্তুর টিভিসহ আরো কিছু মিডিয়া সরাসরি সরকারের হয়ে কাজ করছে। এরা সরকারের প্রোপাগান্ডা মেশিন।
উত্তরমুছুনIs it possible to play the emperor casino online in your browser?
উত্তরমুছুনPlay the online casino หาเงินออนไลน์ online in your browser and 온카지노 have fun. You can play for free, but will also 제왕 카지노 be able to play for real money with