কদরুদ্দীন শিশির
বাংলানিউজ শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে “স্ত্রী হত্যার ছক নিজেই কেটেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সংবাদটির ইন্ট্রো হচ্ছে--
“স্ত্রী মিতু হত্যা পরিকল্পনার ছক নিজেই কেটেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। পুলিশের হাতে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে একথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।”
এখানে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো-- ‘গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র’, ‘তথ্য’, ‘নিশ্চিত’।
‘খবর’টি নিয়ে ইতোমধ্যে তোলপাড় হয়ে গেছে। বহু গোনায় ধরার মতো এবং ভুইফোড় অনলাইন পত্রিকা কপিপেস্ট করে এটি প্রচার করেছে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে শনিবার বিকাল থেকে। মূল পরিবেশক বাংলানিউজের ওয়েবসাইটে ‘খবর’টির সন্ধান মিলছে না! আসলে একেবারে মিলছে না বলাটা ঠিক হবে না। কারণ, প্রতিবেদনটি যে প্রকাশিত হয়েছিল ওয়েবসাইটে তার কিছু নমুনা বিদ্যমান আছে। যদিও ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্রের’ ‘নিশ্চিত তথ্য’ দিয়ে পরিবেশিত প্রতিবেদনটির মূল কন্টেন্ট আর নেই। গায়েব হয়ে গেছে।
এই মুহুর্তে (শনিবার দিবাগত রাত ১১টায়) বাংলানিউজের ওয়েবসাইটে ঢুকে “জাতীয়” ট্যাব এ গেলে দেখা যাচ্ছে- “স্ত্রী হত্যার ছক নিজেই কেটেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার!” শিরোনামের প্রতিবেদনটি আছে। কিন্তু শিরোনামে ক্লিক করার পর যে পাতা আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে শিরোনাম “বাসায় ফিরেছেন বাবুল আক্তার”। এবং ভেতরেও প্রথম শিরোনামটিকে ‘জাস্টিফাই’ করা কোনো তথ্য নেই।
অর্থাৎ, আগের শিরোনাম বদলে ফেলা হয়েছে, এবং তার সাথে ভেতরটাও।
তবে প্রতিবেদনটির ইউআরএল আগের শিরোনাম অনুযায়ী থেকে গেছে। ইউআরএল- www.banglanews24.com/national/news/498393/স্ত্রী-হত্যার-ছক-নিজেই-কেটেছিলেন-এসপি-বাবুল-আক্তার ।
এদিকে, “বাসায় ফিরেছেন বাবুল আক্তার” শিরোনামে নতুন আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলানিউজ। এই প্রতিবেদনটি প্রথম পাতায় দেখাচ্ছে আলাদাভাবে। ইউআরএল-- www.banglanews24.com/national/news/498432/বাসায়-ফিরেছেন-বাবুল-আক্তার
বাংলানিউজ যে করপোরেট গ্রুপের মালিকানায়, সেই বসুন্ধরা গ্রুপ-এরই আরেকটি পত্রিকা দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন বাংলানিউজের প্রতিবেদনটি শনিবার দুপুরে কপি করে বাংলানিউজের বরাতেই অনলাইনে প্রকাশ করে। লিংক- http://www.bd-pratidin.com/city-news/2016/06/25/153459
কিন্তু রাত ১০টার পর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলেছে পত্রিকাটি। বাংলানিউজও কিন্তু এত তোলাপাড় করা একটি সংবাদ, যেটি তারাই প্রথম ছড়ায়, ওয়েবসাইট থেকে প্রত্যাহার করেছে লুকোচুরির মাধ্যমে। কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
কিন্তু আবার যখন ওই কর্মকর্তাটিকে পুলিশ ছেড়ে দিলো, এবং তিনি বের হয়ে এসে বললেন, ‘কে বলল আমি গ্রেপ্তার?’ জানালেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয়, বরং ‘আলোচনা করতে’ ডেকে নেয়া হয়েছিল, তখন ওই সংবাদমাধ্যমটি ‘জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করা’র ভিত্তিতে প্রাপ্ত ‘নিশ্চিত তথ্যে’ পরিবেশিত ‘খবরটি’ চুপ করে গিলে ফেলল! পাঠকের কাছে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়ার মতো কিছু পেল না, বা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাই বোধ করলো না। এই হচ্ছে একটি চরম স্পর্শকাতর ইস্যুতে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে এদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতার নমুনা!
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে অহরহ প্রকাশিত ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত নিশ্চিত তথ্য’গুলোর সত্যতা, ওইসব সংবাদ লেখকদের বস্তুনিষ্ঠতা এবং সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমগুলোর দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে ভাল একটা ধারণা পাওয়া যায় বাংলানিউজের এই কাণ্ড থেকে।
যদি সরকারের উদ্দেশ্য সাধন করে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হওয়ার কারণে বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়ে এমন আজগুবি ‘খবর’ আমদানি করে সেটিকে ‘নিশ্চিত তথ্য’ হিসেবে প্রচার করতে পারে, তাহলে সরকারের বিরোধী যারা, তাদেরকে ঘায়েল করতে ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য’কে কিভাবে ইচ্ছামত ব্যবহার করা হতে পারে কল্পনা করা যায়?
ভয়াবহ!
বাংলানিউজ শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে “স্ত্রী হত্যার ছক নিজেই কেটেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সংবাদটির ইন্ট্রো হচ্ছে--
“স্ত্রী মিতু হত্যা পরিকল্পনার ছক নিজেই কেটেছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। পুলিশের হাতে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে একথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।”
এখানে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো-- ‘গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র’, ‘তথ্য’, ‘নিশ্চিত’।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে বাংলানিউজের বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ইন্ট্রো। বাংলানিউজের ইন্ট্রোই এখানে হুবহু দেয়া হয়েছে। |
‘খবর’টি নিয়ে ইতোমধ্যে তোলপাড় হয়ে গেছে। বহু গোনায় ধরার মতো এবং ভুইফোড় অনলাইন পত্রিকা কপিপেস্ট করে এটি প্রচার করেছে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে শনিবার বিকাল থেকে। মূল পরিবেশক বাংলানিউজের ওয়েবসাইটে ‘খবর’টির সন্ধান মিলছে না! আসলে একেবারে মিলছে না বলাটা ঠিক হবে না। কারণ, প্রতিবেদনটি যে প্রকাশিত হয়েছিল ওয়েবসাইটে তার কিছু নমুনা বিদ্যমান আছে। যদিও ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্রের’ ‘নিশ্চিত তথ্য’ দিয়ে পরিবেশিত প্রতিবেদনটির মূল কন্টেন্ট আর নেই। গায়েব হয়ে গেছে।
বাংলানিউজের ওয়েবসাইটে “জাতীয়” ট্যাব-এ প্রতিবেদনটি এভাবে দেখা যাচ্ছে। |
অর্থাৎ, আগের শিরোনাম বদলে ফেলা হয়েছে, এবং তার সাথে ভেতরটাও।
তবে প্রতিবেদনটির ইউআরএল আগের শিরোনাম অনুযায়ী থেকে গেছে। ইউআরএল- www.banglanews24.com/national/news/498393/স্ত্রী-হত্যার-ছক-নিজেই-কেটেছিলেন-এসপি-বাবুল-আক্তার ।
আগের খবরের শিরোনাম এবং ভেতরের কন্টেন্ট বদলে দিলেও অ্যারো চিহ্তি জায়গায় দেখা যাচ্ছে URL আগের শিরোনাম অনুযায়ী থেকে গেছে। |
“বাসায় ফিরেছেন বাবুল আক্তার” শিরোনামের আলাদাভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি URL লক্ষ্যণীয় |
কিন্তু রাত ১০টার পর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলেছে পত্রিকাটি। বাংলানিউজও কিন্তু এত তোলাপাড় করা একটি সংবাদ, যেটি তারাই প্রথম ছড়ায়, ওয়েবসাইট থেকে প্রত্যাহার করেছে লুকোচুরির মাধ্যমে। কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
শনিবার দিবাগত রাত ১০টার আগে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এর ওয়েবসাইট থেকে নেয়া বাংলানিউজের বরাতে প্রকাশিত খবরটির স্ক্রীনশট। এটিই বাংলানিউজের হুবহু কন্টেন্ট। |
কিন্তু আবার যখন ওই কর্মকর্তাটিকে পুলিশ ছেড়ে দিলো, এবং তিনি বের হয়ে এসে বললেন, ‘কে বলল আমি গ্রেপ্তার?’ জানালেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয়, বরং ‘আলোচনা করতে’ ডেকে নেয়া হয়েছিল, তখন ওই সংবাদমাধ্যমটি ‘জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করা’র ভিত্তিতে প্রাপ্ত ‘নিশ্চিত তথ্যে’ পরিবেশিত ‘খবরটি’ চুপ করে গিলে ফেলল! পাঠকের কাছে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা দেয়ার মতো কিছু পেল না, বা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাই বোধ করলো না। এই হচ্ছে একটি চরম স্পর্শকাতর ইস্যুতে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে এদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতার নমুনা!
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে অহরহ প্রকাশিত ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত নিশ্চিত তথ্য’গুলোর সত্যতা, ওইসব সংবাদ লেখকদের বস্তুনিষ্ঠতা এবং সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমগুলোর দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে ভাল একটা ধারণা পাওয়া যায় বাংলানিউজের এই কাণ্ড থেকে।
যদি সরকারের উদ্দেশ্য সাধন করে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হওয়ার কারণে বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়ে এমন আজগুবি ‘খবর’ আমদানি করে সেটিকে ‘নিশ্চিত তথ্য’ হিসেবে প্রচার করতে পারে, তাহলে সরকারের বিরোধী যারা, তাদেরকে ঘায়েল করতে ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য’কে কিভাবে ইচ্ছামত ব্যবহার করা হতে পারে কল্পনা করা যায়?
ভয়াবহ!
একপাল ক্রিমিনালের হাতে বাংলাদেশের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে।
উত্তরমুছুনচমৎকার লিখছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। এসব হলুদ সাংবাদিকরাই জাতির ধ্বংসের কারণ।
উত্তরমুছুনস্টুপিড পিপল।
উত্তরমুছুন