রবিবার, মে ২৯, ২০১৬

সবপক্ষের বক্তব্য, যুক্তি এবং অজানা সত্য-মিথ্যা

কদরুদ্দীন শিশির

ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে বিএনপি মিলে ভারতে বসে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের কথিত ষড়যন্ত্র নিয়ে একপক্ষীয় বক্তব্যে এতদিন পত্রিকার পাতা ভরছিল। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা সরকারপক্ষের একের পর এক আক্রমণে শিকার হতে থাকা অভিযুক্তপক্ষ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। সরকারপক্ষের বক্তব্যের জয়জয়কার মিডিয়ার সর্বত্র। এমন এক মুহুর্তে প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন।
‍“সজীব ওয়াজেদের সাথে `বৈঠক` হয়েছে: সাফাদি”। আর তাতে ঘটনাপ্রবাহে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। এখন অভিযোগকারী সরকারপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিজেই অভিযুক্ত হয়ে পড়েছেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।

রোববার সকালে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে বাংলা এবং ইংরেজিতে একই বক্তব্য সম্বলিত দুটি আলাদা পোস্ট দিয়েছেন। বাংলা পোস্টটি এখানে হুবহু তুলে দেয়া হল--

“বিএনপি এমনই এক বোকার দল, এমনকি তারা যখন মিথ্যা বলে তখনও বোকামিপূর্ণ ভুল করে। আমি চাই বিএনপি এবং সাফাদি একটা প্রশ্নের জবাব দিক। ওয়াশিংটনের ঠিক কোথায় সে আমার সাক্ষাত পেয়েছে? কোন অনুষ্ঠানে? অন্য কার অফিসে?

প্রথম বোকামিপূর্ণ ভুল তারা করেছে কারণ, আমি গত ৩-৪ বছরে ওয়াশিংটনে কোন অনুষ্ঠান বা কারও অফিসে যাইনি। যে মিটিংগুলো আমার হয়েছে সেগুলো সবই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এবং একান্ত ব্যক্তিগত। তাহলে, কোথায় তার সাথে আমার সাক্ষাত হতে পারে?

আমার সাথে সাফাদির কোনোসময়ই সাক্ষাত হয়নি, এটা ওয়াশিংটনেও না বা অন্যকোনো জায়গায়ও না। সে মিথ্যা বলছে। সে যে বিএনপির জন্য মিথ্যা বলতে সম্মত হয়েছে সেটা দিয়ে এও প্রমাণ হচ্ছে, সে বিএনপির সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত। নাহলে আর কী কারণে সে বিএনপির হয়ে মিথ্যা বলবে?

এটাও খুবই লজ্জাজনক যে বিবিসি বাংলা আসলেই সেই ভুয়া ইন্টারভিউটি ঘটনার সত্যতা যাচাই ছাড়াই প্রচার করেছে। এ ঘটনা সংবাদের উৎস হিসেবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”

জয় ও সাফাদির বক্তব্যের যে তথ্যটি পরস্পরবিরোধী নয়:

জয় এটা অস্বীকার করছেন যে, তিনি সাফাদির সাথে সাক্ষাৎ করেননি। তবে তিনি তার পোস্টে লিখেছেন ‘আমি গত ৩-৪ বছরে ওয়াশিংটনে কোন অনুষ্ঠান বা কারও অফিসে যাইনি।’। বিবিসির প্রতিবেদন মতে, সাফাদিও এটা বলেননি যে, ‘জয় কোথাও গিয়ে’ তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বরং বলা হয়েছে--

“এই বৈঠকের পটভূমি ব্যাখ্যা করে মেন্দি এন. সাফাদি জানান, ৪/৫ মাস আগে তিনি যখন শেষবার ওয়াশিংটন ডিসিতে যান, সে সময় একজন আমেরিকান বন্ধু দু`জনের মধ্যে এই বৈঠকটির আয়োজন করেন। ঐ বন্ধু তাকে জানান, যার সাথে দেখা হবে তিনি বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এরপর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে সজীব ওয়াজেদের অফিসে যান।”

অর্থাৎ, সাফাদিকে তার এক বন্ধু (যিনি হয়তো জয়েরও পরিচিত) জয়ের অফিসেই নিয়ে গিয়েছিলেন। জয় তার ‘নিজের অফিসে’ কারো সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রত্যাখ্যান করেননি। এ ক্ষেত্রে উভয়ের বক্তব্যের এ সংক্রান্ত তথ্যটি কোনো বিরোধীতা নেই। দুজনেরই নিজেদের তথ্যে ‘সঠিক’ হওয়ার সুযোগ থাকে।

ঘটনাপ্রবাহে সংশ্লিষ্ট অন্যদের বক্তব্য:

‘ষড়যন্ত্র করে সরকার উৎখাত করার উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎ’ বিষয়ক ঘটনা এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত এবং সংশ্লিষ্ট পাঁচটি পক্ষ পাওয়া গেছে।

এক. মূল অভিযুক্ত আসলাম চৌধুরী

দুই. তিনি যার সাথে বৈঠক করেছেন সেই মেন্দি এন সাফাদি

তিন. তাদের কথিত বৈঠক করিয়ে দেয়া শিপন কুমার

চার. ভারতে যে অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ্য করে তাদের বৈঠক হয় সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকবৃন্দ

পাঁচ. সর্বশেষ সাফাদির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়


পঞ্চম পক্ষের বক্তব্য আমরা উপরে দেখলাম। এখন বাকিরা তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে কী বলেছেন দেখা যাক।

এক. আসলাম চৌধুরীর বক্তব্য:

গত ১৫ মে গ্রেফতার হওয়ার আগে এবং একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী রিমান্ডে নেয়ার পরও সাফাদির সাথে ব্যবসায়িক ‘ট্রিপ’ এ তার সাক্ষাৎ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কোনো ধরনের সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করেন।

১৬ মে দৈনিক যুগান্তর এর রিপোর্টে জানানো হয়, “আসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে কিন্তু তিনি যে মোসাদের এজেন্ট বা লিকুদ পার্টির নেতা তা জানতেন না। পরে হয়তো বুঝতে পেরেছেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কারও ফাঁদে পা দিয়েছেন। বিষয়টি ছিল তার একান্ত ব্যক্তিগত। দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।”


রিমান্ডে থাকাকালীন এনটিভি অনলাইনের ২২ মে’র এই রিপোর্টটিতেও বলা হয়েছে, “তবে আসলাম ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও কোনো রকম ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ব্যবসায়িক কারণে বিভিন্নজনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় এবং সে কারণেই মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে।”


দুই. মেন্দি এন সাফাদির বক্তব্য:

১৬ মে বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে মেন্দি এন সাফাদি জানান, তার সাথে আসলামের দেখা হয়েছে তবে কোন গোপন বিষয়ে কথা হয়নি। বিবিসির “বিএনপি নেতার সাথে দেখা হয়েছে, বিবিসিকে সাফাদি” প্রতিবেদনটি থেকে--

“ইসরায়েলি রাজনীতিক মেনদি এন সাফাদি স্বীকার করেছেন যে ভারতে তার সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর দেখা হয়েছিল। কিন্তু সেই সঙ্গেই দাবি করেছেন তাদের মধ্যে কোনও গোপন বিষয়ে কথা হয়নি।
ইসরায়েল থেকে টেলিফোনে বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষকে তিনি বলেন, "বাংলাদেশের পরিস্থিতি, সেখানে সংখ্যালঘুদের অবস্থা এগুলো সবাই জানেন – আমরা দুজনে সে সব নিয়েই কথা বলেছি, তাও সেটা একটা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে। আমরা বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছিলাম বা সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিলাম এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতেই পারে না।’
তিনি আরও দাবি করেছেন যে "সরকার ফেলার চক্রান্ত একটা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে করা হচ্ছে – তারপর আবার চক্রান্তকারীরা হাসিমুখে তাদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, এ জিনিস কোথাও আবার হয় না কি?”


তিন. সাফাদি-আসলাম বৈঠক করিয়ে দেয়া শিপন কুমারের বক্তব্য:

প্রথম আলো ১৯ মে “প্রথম আলোকে বললেন শিপন কুমার: আসলাম–মেন্দি বৈঠক হয়েছে, চক্রান্ত হয়নি”  শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়--

“ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরীর বৈঠক করিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের নাগরিক শিপন কুমার বসু। তবে ভারতের মাটিতে ওই বৈঠকে সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন তিনি।
গতকাল ভারত থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটা দাবি করেন ‘হিন্দু স্ট্রাগল কমিটি বাংলাদেশ’-এর সভাপতি শিপন কুমার বসু। আসলাম চৌধুরীর জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহযোগিতা চাইবেন বলেও জানিয়েছেন শিপন।”

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়--

“আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হলো, জানতে চাইলে শিপন কুমার বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে আমার আগে কখনো দেখা হয়নি। চট্টগ্রামের হিন্দু নেতাদের কাছে আমি তাঁর সম্পর্কে জেনেছি। আমি এ বছরের ১ মার্চ ভারতে যাই। এর মধ্যেই জানতে পারি আসলাম চৌধুরী সেখানে এসেছেন। ফেসবুকে আমাদের যোগাযোগ হয়। মেন্দির সঙ্গে ভারতের বিজেপির নেতাদের বৈঠক ছিল। আমার বন্ধুরাই এই বৈঠকে ছিল। আমি তখন আসলাম চৌধুরীকে এই বৈঠকে নিয়ে যাই। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পুরোপুরি ব্যবসায়িক আলাপ। কারণ, আসলাম চৌধুরী একজন বড় ব্যবসায়ী। বৈঠকে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পনা হয়নি।’
আসলাম চৌধুরী কি হিন্দুদের পাশে থাকেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শিপন কুমার বলেন, ‘তিনি সৎ লোক। ব্যবসায়ী। বিপদে আমার পাশে আছেন। কাজেই আমি তাঁর পাশে আছি।’ আসলাম চৌধুরীর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইবেন বলেও দাবি করেন শিপন কুমার।”

চার. ভারতে যে অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ্য করে বৈঠক হয় সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বক্তব্য:

১৬ মে বিবিসি বাংলা “মেন্দিকে ইসরায়েলি গুপ্তচর বলায় বিস্মিত আয়োজকেরা” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেটি পরদিন প্রথম আলো প্রিন্ট সংস্করণে ছাপিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে--

“দিল্লির সেমিনারে যে প্রতিষ্ঠানটি মেন্দি এন সাফাদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, সেই ‘ইন্ডিয়ান সিটিজেনস সিকিউরিটি কাউন্সিল’ সংগঠন মনে করছে দিল্লিতে এসে তিনি বাংলাদেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করবেন, সেটা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য। সংগঠনের আহ্বায়ক বিজয় কুমার বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় আমরা নানা মতের লোকজনকে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম দিই। তাঁদের সঙ্গে এটুকুই আমাদের সম্পর্ক। সাফাদিকেও এভাবেই আমরা ডেকেছিলাম। কিন্তু দিল্লিতে এসে তিনি আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হবেন, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। উনি আমাদের সেমিনারে ১০ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন, ব্যস এটুকুই।’

বস্তুত আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাফাদির যে দেখা হয়েছিল, সেটা কিন্তু ঠিক দিল্লিতে নয়, হয়েছিল আগ্রায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আগ্রা শহরের মেয়র ইন্দ্রজিৎ বাল্মীকিও, যাঁর উপস্থিতিতে দুজনকে মালা পরানো হয়। উপলক্ষটা ছিল আগ্রার সঙ্গে ইসরায়েলের সামারিয়া শহরকে ‘টুইন সিটি’ হিসেবে ঘোষণা করা।”

ভারতীয় একজন সেনাকর্মকর্তার বরাতে সাফাদি সম্পর্কে বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়--

“মেন্দি ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য এবং সম্প্রতি ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক ও আরও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে তিনি বেশ ঘনঘনই ভারতে এসেছেন। ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে তিনি একটি থিঙ্কট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালান এবং ভারতের একাধিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এঁদের একজন মে. জেনারেল (অব.) গগনদীপ বক্সি। সাফাদিকে একজন গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন জেনারেল বক্সি। তিনি বলেন, ‘দেখুন, ইসরায়েলে ওনার ভূমিকা নিয়ে আমি জানি না। তবে ইসরায়েল সরকারের খুব উঁচু মহলে ওনার প্রভাব আছে বলেই আমার মনে হয়েছে। খুব জ্ঞানী লোক, অনেক কিছু জানেন। তিনি ইসরায়েল সরকারের অংশ এবং নিজে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।”

এখানে প্রসঙ্গত, সাফাদির সাথে বৈঠক করায় অভিযুক্ত আসলাম চৌধুরী এবং সজীব জয়ের নিজেদের রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে সরাসরি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।


কার বক্তব্য সত্য, কারটা মিথ্যা!

সজীব ওয়াজেদ জয় তার বিরুদ্ধে আনা সাফাদির অভিযোগকে ‘বিএনপির মিথ্যাচার’ বলে আখ্যা দিয়ে বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন (স্থান উল্লেখ করা নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে যদিও)। এমতাবস্থায় যদি সজীব জয়ের এই বৈঠক অস্বীকার করা বক্তব্য আমলে নেয়া যায় তাহলে ‘ষড়যন্ত্র করিনি’ বিষয়ক আসলাম চৌধুরীর বক্তব্য আমলে নেয়া যাবে না কেন? বরং আসলাম চৌধুরীর দাবি পক্ষে ‘তৃতীয় পক্ষ’, মানে আগ্রার অনুষ্ঠানের ভারতীয় আয়োজকদেরও বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমনটি জয়ের ক্ষেত্রে নেই। তিনি এখনো পর্যন্ত নিজেই নিজের কথা বলছেন বা অস্বীকার করছেন।

এর সাথে দুয়েকটি শক্তিশালী যুক্তিও আসলাম চৌধুরীর পক্ষে যায়, যেগুলো বিবিসিকে সাফাদি নিজেই বলেছেন এভাবে--"সরকার ফেলার চক্রান্ত একটা প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে করা হচ্ছে – তারপর আবার চক্রান্তকারীরা হাসিমুখে তাদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, এ জিনিস কোথাও আবার হয় না কি?"

আরেক জায়গায় তিনি বলেন, “"আমাকে এমন একজন গুপ্তচর দেখান যিনি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার গতিবিধি ফেসবুকে পোস্ট করেন, সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান – সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়ান। এর পরও কেউ আমাকে যদি গুপ্তচর মনে করেন তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই।"

তার যুক্তিগুলো যে কোনো সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষের বুঝতে পারার কথা। এর সাথে যদি যোগ করা হয় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীনদের অকুণ্ঠ এবং নজিরবিহীন সমর্থনের তথ্যটি, তাহলেও বুঝা কঠিন নয় যে, ভারতে বসে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাওয়া কতটা অলীক কল্পনা!

আবার যদি সেই ‘অলীক কল্পনা’ বাস্তবও হয়ে থাকে কোনো দৈব কারণে, তাহলে ১ মার্চ এর পর থেকে গত তিন মাসে বাংলাদেশ সরকার কেন ভারতের কাছে এ জন্য কৈফিয়ত চায়নি! আমরা তো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র করতে থাকা উলফা’র ছোট-বড় সব নেতাকেই ধরিয়ে দিয়েছি তাদের হাতে। ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ হিসেবে তারাও তো আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে তাদের মাটি ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রকারীদের ধরিয়ে দিতে বাধ্য।

এখন উল্টোভাবে প্রশ্ন করলে-
যদি এতসব পক্ষের বক্তব্য এবং যুক্তি আমলে না নিয়ে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত করা যায়, তাহলে সজীব জয়ের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ খন্ডনে কেন শুধু তার নিজের বক্তব্যকে আমলে নিতে হবে!

প্রশ্ন বটে!

নোট: এ ঘটনায় প্রকৃত সত্য কী? বা মিথ্যটাই বা কী- তা আমরা কেউ জানি না। এই লেখাটিতে শুধু সব পক্ষের বক্তব্য এবং সাথে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ‘অজানা’ সত্য-মিথ্যা না উদঘাটিত হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার তো সুযোগ নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন