সোমবার, মে ০৯, ২০১৬

নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য হিন্দু’র চোখে দেখা বাংলাদেশের চলমান সংকট



আজকে, ৯ মে ২০১৬, নিউইয়র্ক টাইমস এবং দ্য হিন্দু বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সমস্যাগুলো নিয়ে দুটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। প্রথমটির শিরোনাম  Bangladesh’s Descent into Lawlessness এবং দ্বিতীয়টির Bangladesh’s battle for its future. দুই সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের চলমান সংকটগুলোকে পত্রিকা দুটি কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে তা ফুটে উঠেছে।



মজার বিষয়, দুটি নিবন্ধেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে পত্রিকাগুলোর নিজেদের দেশের সরকারের মনোভাব অনেকটা ফুটে উঠেছে। বলাই বাহুল্য, দ্য হিন্দুর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়।

দ্য হিন্দুর সম্পাকীয়র key পয়েন্টস-
১. বাংলাদেশে চলমান উগ্রপন্থী হামলার ঘটনাগুলোর সাথে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা বেশি যুক্তিযুক্ত
২. এটা পাকিস্তানপন্থী ইসলামিস্ট এবং স্বাধীনতার পক্ষের সেকুলার শক্তির আদর্শিক লড়াইয়ের ফল
৩. এসবের সাথে আইএস এর সংযোগের যেসব কথা বলা হচ্ছে তা অতটা গ্রহণযোগ্য নয়
৪. তবে যদি শেখ হাসিনা ইসলামপন্থীদের ওপর ক্র্যাকডাউন না চালান এবং আক্রান্তদের পক্ষ না নেন তাহলে আইএস এখানে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, সাথে অন্য উগ্রপন্থীরাও।
৫. জামাত নেতাদের ট্রাইবুনালের বিচারের মুখোমুখি করা শেখ হাসিনার কৃতিত্ব।
৬. তবে তিনি ‘সেকুলারদের’ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলোয় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।


নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়র key পয়েন্টস-

১. বাংলাদেশে ইসলামপন্থী উগ্রবাদীদের উত্থান আতংকজনক
২. এ জন্য (অন্যান্য কারণের সাথে) আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের পারস্পরিক শত্রুতার রাজনীতিও দায়ী
৩. ২০১৪ সালে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে।
৪. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সরকারের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
৫. ট্রাইবুনালকে ব্যবহার করে রাজনীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং নিপীড়ন এসব কারণে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।
৬. শেখ হাসিনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর ক্র্যাকডাউন চালিয়েছেন।
৭. উপরের এসবফ্যাক্টর উগ্রবাদকে উস্কে দিচ্ছে।
৮. আইএস বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করলেও হাসিনা সরকার তা উড়িয়ে দিচ্ছে।
৯. জন কেরি বাংলাদেশ সরকারকে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো তদন্তের যে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দেয়ার কথা বলেছেন শেখ হাসিনার উচিত সেটিকে স্বাগত জানানো।
১০. সরকারকে সম্ভাব্য আক্রান্তদের রক্ষা করতেই হবে এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও আইনের প্রতি মানুষের আস্থা পুণরুদ্ধার করতে হবে।

দুই পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গির বড় পার্থক্যগুলো--

১. দ্য হিন্দু ২০১৪ এর নির্বাচনের বিতর্কিত হওয়ার প্রসঙ্গ সামনে আনতে চায় না।
২. নিউইয়র্ক টাইমস ট্রাইবুনালকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের সমালোচনা করছে। অন্যদিকে সেই একই ট্রাইবুনালের পক্ষে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছে দ্য হিন্দু।
৩. হাসিনা সরকার কর্তৃক বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে কোনো কথা নেই দ্য হিন্দুতে। অথচ টাইমস মনে করে এটাও উগ্রবাদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
৪. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়েও হিন্দু নীরব।
৫. দ্য হিন্দু মনে করে এখানে উগ্রবাদের উত্থানের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশে স্বাধীনতার ‘পক্ষের ও বিপক্ষের’ শক্তির দ্বন্দ্ব থেকে উৎসারিত । উগ্রবাদের পুরো দায় প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জামায়াতের।
৬. বাংলাদেশ সরকারের মতো করে দ্য হিন্দুও আইএস এর বাংলাদেশে ‘অবস্থানকে’ স্বীকার করতে চায় না। অন্যদিকে টাইমস সেটাকে আইএসের দাবিকে হাইলাইট করেছে।
৭. নিউইয়র্ক টাইমস আক্রান্ত সেকুলার ব্লগারদের রক্ষার সাথে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এবং আইনের প্রতি মানুষের আস্থা পুণরুদ্ধারের ওপর জোর দিয়েছে। আর দ্য হিন্দু শুধু সেকুলার ব্লগারদের রক্ষার পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে।

৩টি মন্তব্য:

  1. লক্ষ লক্ষ অনুসারী যেটা বহুকষ্টে প্রতিষ্ঠা করতে হিমসিম খায়, এক মিডিয়ার কৌসুলি লেখায় সেটা মানুষের মগজে ঠাঁই করে নেয়। বিএনপি দুর্গতির বহুকারনের এটাও একটা কারণ যে, এরা মিডিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি।

    উত্তরমুছুন
  2. দ্য হিন্দু পত্রিকা হাসিনা সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়-এমন কিছু বলবে নাকি! পাগল হইসেন! ;)

    উত্তরমুছুন