বুধবার, মে ১৬, ২০১৮

কেমন হয়েছে খুলনার নির্বাচন : সংবাদমাধ্যমের তথ্যে এত বৈপরিত্য!


গতকাল অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি নির্বাচন কেমন হয়েছে- দেশের মানুষের মনে এমন প্রশ্ন থাকা খুবই স্বাভাবিক। উত্তরের জন্য তারা গতকাল টিভি চ্যানেলগুলোর, এবং আজকের জাতীয় পত্রিকাগুলোের আশ্রয় নিলে বিভ্রান্ত হতে পারেন! কারণ, একেকটি সংবাদমাধ্যম ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য একেকভাবে পরিবেশন করেছে। আমরা এখানে শুধু শীর্ষ পত্রিকাগুলোতে আজ বুধবার (১৬ মে) প্রকাশিত নির্বাচন সংক্রান্ত সংবাদগুলোকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে দেখবো।




প্রথমেই দৈনিক সমকালের প্রধান প্রতিবেদনটির কথাই বলা যাক। চমৎকার শব্দচয়নে শিরোনাম করা হয়েছে  ‘জয়ের বন্দরে নৌকা’। শিরোনামটি দেখে মনে হবে ‘নৌকা’র বন্দরে ভিড়ার যাত্রাপথটি খুবই মসৃণ ছিল!

প্রতিবেদনটির ইন্ট্রো হুবহু তুলে ধরা হল--

‍“আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিপুল ভোটের ব্যবধানে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রচারপর্বে নানা শঙ্কার কথা উচ্চারিত হলেও গতকাল মঙ্গলবার বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।”

সমকাল প্রথম পাতায় তিন কলাম একটি ছবিও ছাপিয়েছে। কেন্দ্রে নারী ভোটারদের লাইনের এই ছবিটির ক্যাপশন ছিলো, “মঙ্গলবার খুলনা সিটি নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ লাইন”।

‘ভোটারদের দীর্ঘ লাইন, ‘বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন’ এই শব্দগুলোকেই পুরো রিপোর্টে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের সময় সরকারি দলের লোকজনের জোরজবরদস্তির বিষয়টি ‘বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ’ আকারে তুলে ধরেছে সমকাল এভাবে--

“অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে অন্তত একশ' কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেন। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও গতকাল অনুষ্ঠিত খুলনা সিটির পঞ্চম নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ ও ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে।”

“ভোটচিত্র” উপশিরোনামের অধীনে পত্রিকাটি লিখেছে, “সকাল ৮টা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয় কেসিসি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টায় নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লীমঙ্গল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। নগরীর ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে এই কেন্দ্রের ভোটার সর্বাধিক দুই হাজার ৮৭৩ জন। ভোটাররা জানান, তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন।
সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জটলা। দুপুর ১২টার দিকে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে বিএনপি কর্মী গোলাম মোস্তফা ও সুমন হাওলাদারকে মারধর করা হয়।”

উপরের দুটি প্যারার প্রথমটির শেষে উল্লেখ করা হয়েছে “ভোটাররা জানান, তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন।” কিন্তু ‘কোনো কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন নি’ এমন তথ্য কোথাও দেয়া হয়নি। আর দ্বিতীয় প্যারাটিতে লেখা হয়েছে, ‘একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জটলা’। কোন সে রাজনৈতিক দল- নাম নিতে চায়নি সমকাল!


সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, ‘বিএনপির লোকজন নৌকায় সিল মেরে দোষ দিচ্ছে’ শীর্ষক একটি উপশিরোনাম করেছে পত্রিকাটি! তাতে যা লেখা হয়েছে তা নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো--

“জাল ভোট দিতে গিয়ে প্লাটিনাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকরা। এ সময় কয়েক মিনিট ভোট নেওয়া বন্ধ থাকে। পরে কেন্দ্রে আসেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। সমকালকে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দু-এক জায়গায় উৎসাহী কর্মীরা কিছু সমস্যা করেছে। এর আগের মেয়র নির্বাচনে বিএনপি সমর্থকরা তার তালা প্রতীকের ব্যাজ লাগিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এবার তারা অনেক সতর্ক। কোনো কেন্দ্রে বিএনপির কোনো এজেন্ট নেই। তার পরও বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে- বিএনপির লোকজন নৌকায় সিল মেরে তাদের দোষ দিচ্ছে।”

‘বিএনপির লোকজন নৌকায় সিল মেরে তাদের দোষ দিচ্ছে’ এই দাবিটি শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক না কেন সমকাল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একটি উপশিরোনাম হিসেবে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

সমকালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘নির্বিঘ্নে’ ও ‘বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়া’ একই নির্বাচন নিয়ে মানবজমিন কী লিখেছে এবার দেখা যাক। 



“এটাই ভোট” শিরোনামের লিড নিউজের উপরে হ্যাঙ্গার হিসেবে মানবজমিন ‘খুলনায় নির্বাচনের নতুন মডেল’ বাক্যটি যুক্ত করেছে। প্রতিবেদনের প্রথম দুটি প্যারা এখানে তুলে দেয়া হল--

“বাবার সঙ্গে ভোট দিয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে। কেন্দ্রের বাইরে লাইন। ব্যালট পেপার শেষ। আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে, বাড়ি চলে যান- সবচেয়ে কমন ডায়ালগ। জাল ভোটের রীতিমতো উৎসব। বাধা দেয়নি কেউ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহায়ক ভূমিকায়।

এমনই এক অভূতপূর্ব  ভোটের সাক্ষী হলো খুলনা। গায়েবি ভোটের নয়া মডেলও বলা চলে। হানাহানি নেই, রক্তপাত নেই। ভোটের আগে থেকেই নানা গুজব ছিল মুখে মুখে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন প্রার্থী এবং ভোটাররা। নির্বাচনের দিন গুজব আর শঙ্কারই বাস্তবচিত্র দেখা গেল ভোটে। দখল আর অনিয়মের কারণে তিন কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত রাখলেও বাকি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অন্তত ১৫০ কেন্দ্র দখল করে একতরফা নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনার নির্বাচন অনেকটা অগ্নিপরীক্ষা ছিল নির্বাচন কমিশনের জন্য। নির্বাচন শেষে গতকাল গণমাধ্যমের সামনে আসেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। কমিশন সচিব নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অন্তত এ নির্বাচনটি শতভাগ সুষ্ঠু করে কমিশন বিরোধী পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারতো। এখন তাদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে খুলনার নির্বাচনে দৃষ্টি ছিল সারা দেশের। নির্বাচনের ফলের চেয়ে নির্বাচন কেমন হবে এটি নিয়ে উৎসাহ ছিল বেশি। দিনের শেষে নির্বাচনের ফল দেখে হতাশ হয়েছেন অনেকে।”


এই দুই প্যারার পর পত্রিকাটি আরও ১৫৪৭ শব্দে বিস্তারিত তুলে ধরেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের চিত্র। তাতে মানবজমিনের রিপোর্টারদের দেখা দৃশ্যাবলীর পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শী, উভয়পক্ষের প্রার্থী, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি নানাপক্ষের বক্তব্য রয়েছে।

প্রথম পাতায় লিড স্টোরির বাইরেও মানবজমিন নির্বাচন সংক্রান্ত আরও ৫টি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। শিরোনামগুলো হচ্ছে--

#তালুকদার আবদুল খালেক বিজয়ী

#নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে (ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য)

#‘আমাদের কষ্ট হবে ভেবে ভোটটা ওরাই দিয়ে দিয়েছে’

#কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রে জাল ভোটের গ্রুপ

#১৫০টির বেশি কেন্দ্র দখল করেছে সরকারদলীয় লোকজন: বিএনপি


“‍কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রে জাল ভোটের গ্রুপ” শিরোনামের প্রতিবেদনটির ইন্ট্রোটি তুলে ধরা হলো--

“এ এক অন্য রকম ভোট। স্থায়ীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল না করলেও নগরীজুড়ে ছিল আতঙ্ক। নগরজুড়ে সব কেন্দ্রেই ছিল সরকারদলীয় প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের লোকজনের আধিপত্য। ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি গ্রুপ জাল ভোট দেয়ার মিশনে নামে। ভোটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জাল ভোট দেয়া চালিয়ে যায় নিশ্চিন্তে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক বের হলেই কেন্দ্র দখলে নিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে সিল মেরে বাক্স ভরে সটকে পড়ে তারা।”

প্রকাশ্যে নৌকায় সিলমারা দুটি ছবি মানবজমিন প্রকাশ করেছে দুই প্রতিবেদনে।

খবু সহজেই চোখে পড়ার কথা সমকাল ও মানবজমিনের রিপোর্টের বৈপরিত্য।


এবার দেখা যাক ডেইলি স্টার কী কেমন চিত্র দেখিয়েছে নির্বাচনের? Khaleque wins শিরোনামের লিড স্টোরির সাথে বড় ছবি ছাপিয়েছে ডেইলি স্টার। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে তাতে সিল দিচ্ছেন এক যুবক। কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাড়ির কাছেই।

স্টারের ইন্ট্রোটি হচ্ছে, “Awami League mayor candidate Talukder Abdul Khaleque has won big in yesterday's Khulna City Corporation polls, marred by irregularities such as heavy showdown by the ruling party in and around polling stations, ballot stuffing and driving out polling agents of rival group.”


পত্রিকাটির ৪জন রিপোর্টার ৬০টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাদের দেখার আলোকে ডেইলি স্টার লিখেছে, “Four correspondents of The Daily Star visited at least 60 polling centres and saw how AL men exercised their power to influence voting in many of them.

Wearing badges of boat, the election symbol of Khaleque, the AL men took position outside, at the entrance and inside many polling stations. They barred voters from entering centres and openly asked them to vote for Khaleque.

At some stations, they snatched ballot papers from the voters and were seen casting votes on those. In some cases, presiding officers and assistant presiding officers helped them.”

বিভিন্ন পত্রিকায় নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বরাতে তিনটি কেন্দ্রে অনিয়ম (পরে ভোট বন্ধ) এবং আরো ৫/৬টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে- এমনটি বলা হলেও ডেইলি স্টারের রিপোর্টে ১৩ টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকাটির ৪ জন রিপোর্টার দিনব্যাপী ৬০টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এই ৬০টির মধ্যে রিপোর্টে উল্লিখিত ১৩টি কেন্দ্রের বাইরে আরো কোনোটিতে অনিয়ম দেখেছেন কিনা তার উল্লেখ নেই। শুধু এই ১৩টি কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম হলেও ৬০টি কেন্দ্রের হিসাবে প্রায় চারভাগের একভাগ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে।

এখানে দেয়া স্ক্রিনশট থেকে স্টারের রিপোর্টটি আরও বিস্তারিত  দেখে নিতে পারেন--


AL takes lead in KCC polls marred by threats, stuffing শিরোনামে নিউ এইজ এর ইন্ট্রো হচ্ছে--

“Khulna city mayoral elections ended on Tuesday amid allegations of widespread rigging, ballot stuffing and muscle flexing by ruling Awami League activists, with AL candidate Talukder Abdul Khaleque taking the lead.”


ভোটগ্রহণের চিত্র ফুটে উঠেছে পত্রিকাটির রিপোর্টে--

“The polling stations were dominated by the activists of ruling Awami League mayoral candidate Talukder Abdul Khalek, who moved around the polling areas in free style, violating electoral codes, with law enforcers turning a blind eye.

‘The allegation of law enforcers turning a blind eye is baseless. There were observers in all the centres. They have seen it. There were media too,’ Khulna Metropolitan Police commissioner Humayun Kabir told New Age in the evening.”

আরো কয়েকটি প্যারা দেখুন--

“There were hardly any queues of voters at polling centres throughout the day while many voters said they could not cast their votes as the polls officials said them that their votes were already casted.”

“At Pioneer Higher Secondary School at Ward 25, the Awami League men were seen moving in and around the polling centres. A ballot book was seen half-finished at just 8:15am. Presiding officer Shamim Mahmud of the centre said the Awami League activists were helping voters to cast their votes. No agent of Manju was seen in the centre.

First time voter Abdul Alim of Ward 29 was seen walking along the corridor of Kailaghat Government Primary School about 1:00pm. He told New Age that he could not cast his vote as the polls officials told him that his vote was already casted.”


প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘তালুকদার খালেক জয়ী’। এই রিপোর্টটি শুধু কিছু পরিসংখ্যান ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-নির্ভর। পাশে তিন কলামে ‘পরিবেশ দৃশ্যত শান্ত, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভোটে অনিয়মের চিত্র।

রিপোর্টের শুরুতে লেখা হয়েছে--

“খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়নি। বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ছিল শান্ত, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন কেন্দ্রে জোর করে বুথে ঢুকে ব্যালটে সিল মারা, জাল ভোটের ঘটনাও ঘটেছে। তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশের বিরুদ্ধে দর্শকের ভূমিকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে।
প্রথম আলোর পাঁচজন প্রতিবেদক ও তিনজন আলোকচিত্রী ৮০টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে অন্তত ৬০টি কেন্দ্রেই ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের পাওয়া যায়নি। বিএনপির অভিযোগ, আগে থেকেই ধরপাকড় ও হুমকি-ধমকিতে তাদের নেতা-কর্মীরা ছিলেন মাঠছাড়া। বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ঢুকতে পারেননি কিংবা বের করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, জোর করে সরকারি দল জয় কেড়ে নিয়েছে। এটা ছিল কলঙ্কিত নির্বাচন। নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে, সে সম্পর্কে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়ার কথা জানান তিনি।”

‘জোর করে সিল, ভোট সাময়িক বন্ধ’, ‘ভোট দিল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে’, ‘ভোটার আছেন, ব্যালট শেষ’- এমন উপশিরোনাম করা হয়েছে। প্রথম পাতায় কারচুপি/অনিয়মের ছবি না দিলেও ৩য় পাতায় এমন দুটি ছবি ছাপিয়েছে প্রথম আলো।








দৈনিক কালের কণ্ঠ নির্বাচনকে সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। লিড স্টোরির শিরোনাম, ‘খুলনা আবার খালেকের’। প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে--


“কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তবে প্রতিপক্ষ বিএনপি বলেছে, এই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রভাব বিস্তার ছাড়াও কারচুপি ও জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ এনেছে তারা। বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘সরকারি দল ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছে।’ তিনি শতাধিক ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন খুলনায় শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবি করেছে।”

বিজয়ী খালেকের ‘ভি চিহ্ন’ দেখানো একটি ছবি প্রথম পাতায় ছাপিয়েছে কালের কণ্ঠ। এছাড়া ভেতরে বাইরে কোনো ছবি নেই। মানবজমিন, ডেইলি স্টার, প্রথম আলো যেমন ভোট কারচুপির এক বা একাধিক ছবি ছাপিয়েছে, কালের কণ্ঠ তেমনটি করেনি। ইন্ট্রোর মতো প্রতিবেদনের ভেতরেও কারচুপির ঘটনাগুলোকে ‘বিএনপির অভিযোগ’ হিসেবেই শুধু উল্লেখ করেছে। এর পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যও ছাপিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী বা ভোটার বা নিজেদের প্রতিবেদকরা কী দেখেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ নেই।

তবে একটি প্যারায় লেখা হয়েছে, “দুপুর ১২টার সময়েই ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট বের করে দিয়ে একদল যুবক ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলে। এই কেন্দ্রে নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একদল যুবক কেন্দ্রে ঢুকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেয়। এরপর তারা ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ভরে। দুপুর ১২টার দিকে ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে তাদের বলা হয়, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে। ব্যালট পেপার আনতে লোক পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. ইবনুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রে কিছু বহিরাগত এসে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। যে কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।”

একাধিকবার ‘একদল যুবক’ ‘কিছু বহিরাগত’ লেখা হয়েছে। কিন্তু এই একদল যুবক কারা, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী- এসব উপেক্ষা করে গিয়েছে পত্রিকাটি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী কেন জিতেছেন তার কারণ দেখিয়েছে কালের কণ্ঠ। লিখেছে, “আওয়ামী লীগের এবারের জয়ের পেছনে নগরীর ব্যাপক উন্নয়নকাজ মূল ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অনেকে।”

“নৌকার জয় খুলনায়” শিরোনামে লিড স্টোরিতে ভোটগ্রহণ চিত্রের বর্ণনায় না গিয়ে ‘আওয়ামী লীগের জয়’কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। শুধু বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ছিল এ প্রতিবেদনে। প্রথম পাতায় “বিক্ষিপ্ত ঘটনা শান্তিপূর্ণ ভোট” শিরোনামে আলাদা আরেকটি প্রতিবেদন ছাপায় পত্রিকাটি।

এতে শুরুতেই লেখা হয়েছে, “প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ভোটের আগে উত্তেজনা ছড়ালেও বড় ধরনের কোনো গোলমাল ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বেশকিছু কেন্দ্রে জাল ভোট, গোলযোগ, এজেন্টদের বাধা দেওয়া ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোথাও বড় ধরনের কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলে। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় গণনা। ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই কেন্দ্রগুলোয় ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নারী ও নতুন ভোটারের উপস্থিতি ছিল ভালো।”

এই রিপোর্টে কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়মের চিত্র কিছুটা তুলে ধরা হলেও ‘গোলমাল ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হওয়া’ ‘ নারী ও নতুন ভোটারের উপস্থিতি ছিল ভালো’ , ‘নতুনদের উচ্ছাস’, ‘ইভিএমে উচ্ছাস’ ইত্যাদি বিষয়গুলোকেই বেশি প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। শিরোনামেও এই প্রচেষ্টা স্পষ্ট।

ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কালের কণ্ঠ-সমকালের মতো ছিল বাংলাদেশ প্রতিদিন। অনিয়ম, কারচুপির কোনো ছবি নয়, বিজয়ী খালেকের ও এক নারী ভোটারের ছবি ছাপিয়েছে পত্রিকাটি।


“খুলনার মেয়র খালেক” শিরোনামের লিড স্টোরিতে ইত্তেফাক নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়গুলো উল্লেখ করার ক্ষেত্রে ছিল একদম নিস্পৃহ। রিপোর্টটি পড়লে একটি নির্ঞ্ঝাট একটি নির্বাচনের চিত্র ফুটে ওঠবে। শুধু বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কয়েক লাইন আছে। লিডের পাশে সিঙ্গেল কলামে শিরোনাম ছিল ‘বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট খুলনায়’

এই রিপোর্টের ইন্ট্রোতে লেখা হয়েছে--

“বিক্ষিপ্ত কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। বেশিরভাগ কেন্দ্রে উত্সবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। পুরুষদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ  নির্বাচনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে তিনটি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে।”

ভেতরে অনিয়ম কারচুপির কয়েকটি বর্ণনা আছে অবশ্য। তবে ইত্তেফাকের এই রিপোটে এমন একটি তথ্য পাওয়া গেছে যা অন্যান্য পত্রিকায় পাওয়া যায়নি। তা হচ্ছে সাংবাদিকদেরকে ব্যাপকভাবে বাধা দেয়া।

পত্রিকাটি লিখেছে, “কিছু ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।....২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নূরানী বহুমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে একজন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা সকাল থেকেই ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকে। এক তরুণের জাল ভোটের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করা হলে সেটি ডিলিট না করা পর্যন্ত গণমাধ্যমকর্মীকে সেখান থেকে আসতে দেওয়া হয়নি।
একই ওয়ার্ডের সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে একদল যুবক প্রকাশ্যে এক প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারতে থাকে। সাংবাদিকরা সেখানে পৌঁছালে তারা দীর্ঘ সময় সাংবাদিকদের ঘিরে রাখে। একই ঘটনা ঘটে দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশে সাংবাদিকদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সমকাল, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ইত্যাদির মতো অনিয়মের কোনো ছবি ছাপায়নি ইত্তেফাক।

যুগান্তরের লিড ছিল, ‘খুলনা সিটিতে নৌকার জয়’। ইত্তেফাকের মতো দিনের প্রধান প্রতিবেদনটিতে যুগান্তর ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের চিত্রকে গুরুত্ব দেয়নি। শুধু বিএনপির অভিযোগ আকারে কিছু কথা উল্লেখ করেছে। তবে পাশে ডাবল কলামে ‘বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট বিক্ষিপ্ত সহিংসতা’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে কিছু চিত্র উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনটির ইন্ট্রোতে লেখা হয়েছে--

“বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ, কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শোডাউন এবং বিক্ষিপ্ত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের সময় বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ভোট গ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। তবে বেলা গড়াতেই ভোট কেন্দ্রের এ উৎসবের দৃশ্যে অনেকটা ভাটা পড়ে। বেলা ১১টার পর থেকে অনেক ভোট কেন্দ্রের সীমানার ভেতর ও বাইরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো।”

ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুগান্তরও ছিল ‘সাবধানী’! বিজয়ী খালেক, নারী ভোটারদের লাইন, এবং কেন্দ্র দখল করে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে- এমন তিনটি ছবি প্রথম পাতায় ছাপালেও সিল মারার ছবিটি ছিল সবচেয়ে ছোট (এক কলাম ইঞ্চির মতো!)।




“ব্যাপক অনিয়মের নির্বাচনে খুলনায় নৌকা বিজয়ী”   শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদনে নয়াদিগন্ত লিখেছে--

“খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিজয়ী হয়েছেন। বেসরকারি ও স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফলে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৬টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। অন্য দিকে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন এক লাখ আট হাজার ৯৫৬ ভোট। তবে রাত ১টা পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ১৬৩ কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা যায় নৌকা পেয়েছে ৯৪৩৫২ ভোট আর ধানের শীষ পেয়েছে ৫৯৪৫৮ ভোট। তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।

নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর পে কমপে ৯৫টি কেন্দ্রে নানা ধরনের অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বহু কেন্দ্র থেকে। অনেক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। 
নির্বাচনে ছিল জাল ভোটের ছড়াছড়ি। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প। ব্যালটে অবৈধভাবে সিল মারার অভিযোগে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সাময়িক স্থগিত রাখা হয় আরো দু’টি কেন্দ্রে। শুরুর দিকে ভোটগ্রহণ কিছুটা শান্তিপূর্ণ মনে হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। দুপুরের পর থেকে ২৮৯ কেন্দ্রের বেশির ভাগ থেকেই আসতে থাকে অনিয়মের খবর।”


বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর কভারেজও অনেকটা এরকম। কেউ অনিয়মের চিত্র লাইভ দেখিয়েছে, কেউ দেখায়নি। কেউ বুলেটিনে ‘অনিয়মের চিত্র’ এর চেয়ে ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন’ দেখানোকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে টিভি কভারেজকে প্রামাণ্যভাবে এই লেখায় তুলে ধরা হচ্ছে না।

আগের কিছু খবর:

খুলনার নির্বাচনে ভোটের চিত্র তুলে ধরতে সংবাদমাধ্যমগুলোর বৈপরিত্যমূলক অবস্থান উপরে দেখা গেল। এবার দেখা যাক ভোটের আগের কিছু খবর, যেগুলোর মাধ্যমে পাঠক পূর্বাপর ঘটনা প্রবাহের সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।

১৪ মে বিডিনিউজের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম, “খুলনার ভোটে সাংবাদিকদের জন্য ৭ নির্দেশনা”। নির্দেশনাগুলো কী তা নিচের স্ক্রিনশটে দেখে দেখে নিতে পারেন--


গত ১৬ মে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম, “বিএনপির মঞ্জু অপপ্রচার করছেন, বললেন খালেক”। ভেতরে লেখা হয়েছে--

“তালুকদার খালেক ‘খুলনার সচেতন সাংবাদিক সমাজকে’ অভিনন্দন জানিয়েছেন, যারা উন্নয়নের স্বার্থে তাঁর পক্ষে কাজ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক এস এম শাহিদ হোসেন বলেন, এই নির্বাচনে ৯০ ভাগ সাংবাদিক তালুকদার খালেকের পক্ষে কাজ করেছেন। তাই তিনি মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর এখানে স্থানীয় যেসব পত্রিকা বিজ্ঞাপন বঞ্চিত, তাদের বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন। তালুকদার খালেক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।”



আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার খালেকের পক্ষে যে ৯০ ভাগ সাংবাদিক (উপরে শাহিদ হোসেনের দাবি অনুযায়ী) কাজ করেছেন তার বুঝা যায় বাংলাট্রিবিউনসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে। ২০ ৩০  এপ্রিল বাংলাট্রিবিউনের প্রতিবেদনের শিরোনাম, “কেসিসি নির্বাচন: নৌকার পক্ষে ভোট চাইলো ‘সচেতন সাংবাদিক সমাজ”।

স্ক্রিনশটে দেখুন সংবাদটি--




শুধু খুলনার স্থানীয় সাংবাদিকদের বেশিরভাগই নন, ঢাকার শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিকদের (সংবাদমাধ্যমের কর্তব্যক্তি এবং সাংবাদিক সংগঠনের নেতা) কেউ কেউও খালেকের পক্ষে মাঠে গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন! (এবং ঢাকায় বসে তারাই আবার খুলনায় ভোটগ্রহণ চিত্রের কভারেজ নিজের প্রতিষ্ঠানে কেমন হবে তার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন!) নিচের সংবাদটি লক্ষ্য করুন।



“ভোটগ্রহণের দিন সাংবাদিকদের চলাফেরায় ইসির কড়াকড়ি, স্থানীয় সাংবাদিকদের বেশিরভাগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে (‘সচেতন সাংবাদিক সমাজ’ এর ব্যানারে) সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়া, সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে ঢাকার শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিক নেতার মাঠে নামা, ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সাংবাদিকদের কাজে বাধা-হুমকি দেয়া (সূত্র ইত্তেফাক)- ইত্যাদি ঘটনাবলীর সাথে প্রামাণ্যভাবে উপরে তুলে ধরা সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরের বৈপরিত্যের বিষয়টি মিলিয়ে পড়া যেতে পারে!”

1 টি মন্তব্য:

  1. করোনা: বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ১ লাখ ৭০ হাজার ছাড়াল আরো জানতে
    https://www.gazipurkotha.com/করোনা-বিশ্বব্যাপী-মৃত্যু-১-লাখ-৭০-হাজার-ছাড়াল/21762

    উত্তরমুছুন