বুধবার, জুন ০৮, ২০১৬

একটি ক্রসফায়ার: প্রথম আলো ও বিডিনিউজকে দেয়া পুলিশের তথ্যে গরমিল!


বুধবার সংবাদমাধ্যমগুলোতে সরকারি বাহিনী কর্তৃত দুটি বিচারবহির্ভূত হত্যার খবর এসেছে। পত্রিকাগুলো তাদের অনলাইনে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে ঘটনা দুটিকে উল্লেখ করেছে। একটি ঘটনা বগুড়ায়, অপরটি যশোরে। এখানে যশোরের ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাকে কী তথ্য দিয়েছেন তা দেখবো।

বিডিনিউজের “যশোরে ডাকাতি মামলার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে--


//
“মঙ্গলবার গভীর রাতে যশোর-মাগুরা সড়কের পাঁচবাড়িয়ায় সিনজেনটা বীজ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের কাছে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক জানান।

নিহত আবদুল গণির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২১টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরিফুল হক বলেন, ‘ডাকাতির প্রস্তুতি চলছে’ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে ডাকাতরা গুলি ছোড়ে।

“পুলিশও পাল্টা গুলি করলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে স্থানীয়রা গণির লাশ শনাক্ত করে।”
//


আর প্রথম আলোর “যশোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত” শিরোনামের খবরটি থেকে উদ্ধৃতি--

//
“পুলিশেরে ভাষ্য, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে পুলিশের একটি দল যশোর-মাগুরা মহাসড়ক দিয়ে ইছালী এলাকার দিকে যাচ্ছিল। পথে পাঁচবাড়িয়া এলাকায় রশি টাঙিয়ে সড়ক আটকানো দেখে গাড়ি থেকে নেমে আসে পুলিশ। এ সময় দুর্বৃত্তরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তি মারা যান।

এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেনের দাবি, রাতে সড়কে রশি টাঙিয়ে ওই দুর্বৃত্তরা ডাকাতির চেষ্টা করছিল। পুলিশ দেখে তারা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশও পাল্টা ১০টি গুলি ছুড়ে। ডাকাতদের ছোড়া গুলিতেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অন্যরা পালিয়ে গেছেন। গুলিবিদ্ধ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখা হয়।

ওসি জানান, কেউ লাশের সন্ধান না করায় বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মফিদুলের কর্মকর্তাদের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছে।”
//


বিডিনিউজ কথা বলেছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক এর সাথে আর প্রথম আলো বক্তব্য নিয়েছে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেনের।

উভয় কর্মকর্তার বক্তব্যের গরমিলগুলো:

১.
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানাচ্ছেন, ‘ডাকাতির প্রস্তুতি চলছে’ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।

অন্যদিকে ওসি বলছেন, পুলিশের একটি দল যশোর-মাগুরা মহাসড়ক দিয়ে ইছালী এলাকার দিকে যাচ্ছিল। পথে পাঁচবাড়িয়া এলাকায় রশি টাঙিয়ে সড়ক আটকানো দেখে গাড়ি থেকে নেমে আসে পুলিশ।

অর্থাৎ, পুলিশ  ‘ডাকাতির প্রস্তুতির খবর’ আগে থেকে পেয়ে যায়নি। অন্য কাজে এক জায়াগায় যাচ্ছিল, পথে শিকারের জন্য বসে থাকা ডাকাতরা তাদের দেখে আটকাতে চেষ্টা করে। তখন গোলাগুলি হয়।

২.
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেছেন, “ঘটনাস্থল থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে স্থানীয়রা গণির লাশ শনাক্ত করে।”  অর্থাৎ, লাশ হস্তান্তরের আগেই নিহতের পরিচয় সনাক্ত করা গেছে।

কিন্তু ওসি বলেছেন, “কেউ লাশের সন্ধান না করায় বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মফিদুলের কর্মকর্তাদের কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছে।”

লাশটি তো নিশ্চয়ই উদ্ধারের আগে আঞ্জুমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি, উদ্ধারের পরেই হয়েছে। উদ্ধারের পরেই যদি স্থানীয়রা লাশের পরিচয় সনাক্ত করে নামও জেনে ফেলেন (পুলিশ সুপারের ভাষ্য মতে) তাহলে হস্তান্তরের সময় লাশটি ‘বেওয়ারিশ’ হয় কিভাবে? স্থানীয়রা যেহেতু চিনেছেন, তার মানে নিহত ব্যক্তি ওই এলাকারই মানুষ। যদি তাই হয়, তার একজন স্বজনও আসেনি লাশ নিতে?

৩.
প্রথম আলোর সংবাদের প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।’ তখন পত্রিকাটির রিপোর্টার ওসির সাথেও কথা বলে নিয়েছেন। ওসি তাকে নিহতের পরিচয় জানাতে পারেননি। জানাবেন কিভাবে? ওসি তো নিজেই জানেন না এবং না জানা অবস্থায় আঞ্জুমানের কাছে লাশ হস্তান্তর করে দিয়েছেন।

যদি লাশের পরিচয় না জানা অবস্থায় হস্তান্তর করা হয়ে থাকে, তাহলে সুপারের বক্তব্য মতে ‘উদ্ধারের পর স্থানীয়রা লাশ সনাক্ত করেন’- এই তথ্যের কী হবে?

২টি মন্তব্য: